যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন : উদার ও সহনশীল আমেরিকা দেখতে চাই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচনের পর নাটকীয়তা কম হয়নি, অবশেষে সকল অপেক্ষার শুভ সমাপ্তি ঘটলো বাইডেনের জয়ের মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রত্যক্ষ ভোট সবচেয়ে বেশি পেলেন তিনি। যে ভোটে জয়পরাজয় নির্ধারিত হয় সেই ইলেকটোরাল ভোটে বাইডেন পেলেন ২৭৩ ভোট, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০টি ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ভোট। অবশ্য কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণনা এখনো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান কমলা হ্যারিস।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। তবে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে কয়েকটি রাজ্যে পুনঃ ভোট গণনার দাবি জানিয়েছেন।
তিনি এ ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ে যাবেন বলেছেন। এদিকে জো বাইডেন বিজয়ী হবার পর আমেরিকানদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিভেদের পরিবর্তে সমগ্র আমেরিকানদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় বাইডেনের কাছে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন।
বাইডেন তাঁর বিজয় পরবর্তী প্রদত্ত ভাষণে বলেন, মার্কিন জনগণÑতাঁকে করোনভাইরাস মোকাবিলা, ঝুঁকিতে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং পদ্ধতিগত বর্ণবাদ মোকাবেলায় ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমরাও মনে করি, বাইডেনের এ বিজয়ের মাধ্যমে দেশটিতে উদার, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়াবলীই প্রাধান্য পাবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে জাতিÑধর্মÑবর্ণ ও অভিবাসীদের নিয়ে বিভেদ উস্কে দিয়েছিলেন, এবার তার অবসান ঘটবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সক্রিয় সমর্থন দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে দেশটি প্রভাববিস্তারকারী ভূমিকা রাখবে বলে পর্যবেক্ষক মহল আশা করেন। দু দেশের মধ্যেকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হবে বলে আমরা আশা করি। বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সবচাইতে বেশি। ট্রাম্পের আমলে যেভাবে আগ্রাসী কূটনীতি ও যুদ্ধ সংঘাতের রাজনীতির বিস্তার হয়েছে, আমরা আশা করি বিশ্বশান্তি ও জাতিতে জাতিতে মৈত্রীর সম্পর্ক রচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জন করবে। কোডিভÑ১৯ মহামারির সময় বিশ্ব যে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তার প্রতিকারে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে ঐক্য ও সহমর্মিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্ববাসী আশা করে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ ও বহুজাতিক শান্তি চুক্তি অনুসারে কাজ করবেÑআমরা তা চাই।
জো বাইডেনের এই বিজয় বিশ্বসভায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।