হাতে লেখা টিকেটে রেল ভ্রমণ !

৫ জুলাই মেঘনা ট্রেনে নাঙ্গলকোট থেকে চট্টগ্রামে আসা এক যাত্রীর টিকেট

ডিজিটাল যুগে এনালগ রেলওয়ে#
ভূঁইয়া নজরুল :
অনলাইন টিকেটের যুগেও হাতে লেখা টিকেট নিয়ে ট্রেন যাত্রা! স্টেশন মাস্টারের কক্ষ থেকেই বিক্রি হচ্ছে এই হাতে লেখা টিকেট। আর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এসব টিকেটের।
রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন পরিচালনা শুরু করে। চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর সুবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃনগর উদয়ন/পাহাড়িকা এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা শুরু করলেও যাত্রী কম হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় সোনারবাংলা এক্সপ্রেস। রেলওয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এসব ট্রেনের সব টিকেট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। রেলওয়ের অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট সংগ্রহ করতে হয় এবং স্টেশনের কাউন্টারে কোনো টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু রোববার ৫ জুলাই হাতে লেখা টিকেট নিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট স্টেশন থেকে মেঘনা ট্রেনে এক মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। টিকেটের গায়ে ভাড়া ১১৫ টাকা লেখার কথা থাকলেও প্রতি টিকেট ২৫০ টাকা করে দুটির জন্য ৫০০ টাকা নিয়েছে বলে ওই মহিলার মেয়ে পারভিন আক্তার সোহাগী জানান। সোহাগী বলেন, ‘টিকেটের গায়ে ১১৫ টাকা লেখা থাকলেও আমাদের দুটো টিকেটের জন্য স্টেশন মাস্টার ৫০০ টাকা নিয়েছেন।’
কিন্তু অনলাইনের এই যুগে তো স্টেশন থেকে টিকেট সংগ্রহ করা যায় না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো স্টেশন মাস্টারের রুম থেকে তা সংগ্রহ করলাম।’
কিভাবে এই টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে ফোন করা হয় নাঙ্গলকোটের স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিনের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমার এখানে কোনো হাতে লেখা টিকেট বিক্রি হয় না। অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে এখানে কোনো হাতে লেখা টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।’
কিন্তু আপনার কক্ষ থেকে এই টিকেট বিক্রি হচ্ছে এবং ১১৫ টাকার টিকেট ২৫০ টাকা করে নিয়েছেন। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তো আজ (রোববার) অফিসে যাইনি। কে বিক্রি করেছে জানি না। তবে যদি আপনার (প্রতিবেদক) কখনো লাগে তাহলে বলিয়েন।’
হাতে লেখা টিকেটে যাত্রী শুধু মেঘনা নয়, পাহাড়িকায়ও আসছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট চেকিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তি। তারা জানান, সবচেয়ে বেশি যাত্রী আসে মেঘনা ট্রেনে। আর পাহাড়িকায় কিছু আসে। এরা মূলত নাঙ্গলকোট, কোর্ট চাঁদপুর, মধুরোড প্রভৃতি স্টেশন থেকে এসে থাকে।
কিন্তু অনলাইনের যুগে হাতে লেখা টিকেট কিভাবে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ‘আমাদের যেসব স্টেশনে আগে কম্পিউটারাইজড টিকেট বিক্রি হতো না, সেসব স্টেশনগুলোতে হাতে লেখা টিকেট বিক্রি হয়ে থাকে।’
কিন্তু এখন তো টিকেট কম্পিউটার থেকে আসে না, আর স্টেশনে কম্পিউটার থাকারও দরকার নেই। রেলওয়ের অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে টিকেট বিক্রি হবে। তাহলে হাতে লেখার প্রশ্ন আসছে কেন? এবিষয়ে আনসার আলী বলেন, ‘যেসব স্টেশনগুলো আগে কম্পিউটারাইজড ছিল না সেসব স্টেশনগুলো অনলাইনের অ্যাপসের মধ্যে নেই। এতে যাত্রীদের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কোনো স্টেশনের নামে টিকেট কাটতে হয়। সেজন্য আসন খালি থাকা সাপেক্ষে আমরা স্টেশনগুলোর কোটার ভিত্তিতে কিছু টিকেট বিক্রি করার অনুমোদন দিয়েছি।’
তাহলে নাঙ্গলকোট স্টেশনের স্টেশন মাস্টার টিকেট বিক্রি হয় না একথা কেন বললেন? এর জবাবে তিনি বলেন ,‘এটা তো জানি না কেন বলেছে।’
আবার বাড়া বেশি নিচ্ছে কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এধরনের কোন কোন স্টেশনে হাতে লেখা টিকেট বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাঙ্গলকোট ছাড়াও কোর্ট চাঁদপুর, মেহের, হাজীগঞ্জ, মধুরোড স্টেশনে হাতে লেখা টিকেট বিক্রি হয়।
উল্লেখ্য, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রি করছে। স্টেশনে এখন আর কোনো টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।