হল লিজ নিছি, যখন ইচ্ছা তোদের বের করে দেব

চবিতে সাংবাদিকদের ছাত্রলীগ কর্মীদের হুমকি

চবি সংবাদদাতা »

‘আমরা সাংবাদিক প্রক্টর খাই না। কি করবি তোরা? বেশি হইলে নিউজ করবি। এই ‘হল’ আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদের হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের।’
এভাবেই ১৬ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আলাওল হলে সাংবাদিকদের হুমকি দেয় ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের নেতাকর্মীরা। এ ব্যাপারে বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াস হোসাইনকে কয়েকবার জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। জানা গেছে, বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াস হোসাইনের পরোক্ষ মদদেই তার কর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সাংবাদিকদের সাথে ঝামেলা তৈরি করে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের অনেকেই আলাওল হলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব ব্লকে অবস্থান করে। বেশ কিছুদিন ধরেই শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত কক্ষের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর আগে কয়েকবার ঝামেলার চেষ্টা করলেও সিনিয়রদের মাধ্যমে সুন্দরভাবে সমাধান করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারীর ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর দেখা যায় এই ব্লকের ওয়াইফাইয়ের তার চুরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল জোবায়ের তার কক্ষে তারটি লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে তাকে বার বার তারটি ফেরত দিতে বলা হলেও সে কোনরকম ভ্রুক্ষেপ করেনি। প্রায় দুই মাস পর কেটে ছোট করে ফেলা তারটি উদ্ধার করা হয়। এরপর কয়েকবার ২০৯ ও ২০২ নম্বর কক্ষ দখলের চেষ্টা ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকরা তাদের সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা এবং তৎকালীন হল প্রভোস্টের মধ্যস্থতায় সেসব বিষয় সমাধান করে।
কিন্তু সর্বশেষ ১৫ জুন (বুধবার) রাত প্রায় দেড়টার দিকে ব্লকে এসে আবদুল্লাহ আল জোবায়ের ৫-৭ জন শিক্ষার্থীসহ হৈ-হুল্লোড় করে। পরদিন ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত বারোটার দিকে নিলয়সহ ১৫-২০ জন চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার রেশ ধরে চিল্লাচিল্লি ও অকথ্য ভাষায় গালাগালির মাধ্যমে সাংবাদিকদের হেনস্থা করতে থাকে। এরপর আরও দুই দফা এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকে। বার বার কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয় এবং গায়ের উপর চড়াও হয়। এছাড়া তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে রুম ভাঙচুরের চেষ্টাও করে। পুরো ব্লকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঘটনা বেগতিক দেখে খবর পেয়ে সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম ও এস এ এম জিয়াউল ইসলাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
সাংবাদিকদের সাথে হুমকি প্রদানে জড়িতরা হচ্ছেন ২০১৫-১৬ সেশনের তুষার তালুকদার বাপ্পা, ২০১৬-১৭ সেশনের ওবায়দিল হক লিমন, রানা আহমেদ ও আশিষ দাস, ২০১৭-১৮ সেশনের সাজ্জাদুর রহমান ও আবির আহমেদ, ২০১৮-১৯ সেশনের আবদুল আল জোবায়ের (নিলয়), প্রমিত রুদ্র ও জাহিদুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরো ১০ জন।
এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াস হোসাইন। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু জানান, এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ। এরা ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাদের হেনস্তার চেষ্টা কখনোই ছাত্রলীগ কর্মীদের কাজ হতে পারে না। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছি। এছাড়া প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু অডিও রেকর্ডও হাতে এসেছে। এমন অশালীন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে কখনোই কাম্য না। তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।