সাম্প্রদায়িক হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক »
সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত প্রতিরোধে ২৩ অক্টোবর সারাদেশে গণ-অনশন ও গণঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
গতকাল আন্দরকিল্লা মোড়, চেরাগীপাহাড়, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ন্যায় বিচার দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
সাম্প্রদায়িক হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া কোনও সুযোগ নেই বলেছেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে দুর্গোৎসব চলাকালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা জানায়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত প্রতিরোধে ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গণ-অনশন ও গণঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার শাহবাগ এবং চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হবে।’
এতে বিভিন্ন সময়ে হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি বলেন, ‘মহাষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর ভেঙে দেওয়া হয় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ ও চানমনি কালিবাড়ি বিগ্রহ ও ফটকে অগ্নিসংযোগে করা হয় এবং ১৭টি পূজামণ্ডপের তোরণ ভেঙে দিয়েছে। এরপর থেকে শুরু একনাগাড়ে দশমী পর্যন্ত চলে এসব হামলা।’
লিখিত বক্তব্যে হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৩ অক্টোবর একই দিনে কুমিল্লা ছাড়াও হাজীগঞ্জে দুর্বৃত্তরা ত্রিনয়নী সংঘের পূজামণ্ডপ, লক্ষ্মী-নারায়ণজী আখেড়ার গেইট ভেঙ্গে ফেলেছে, রামকৃষ্ণ মিশন জমিদার বাড়ির দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ, দশভূজা সংঘ, সোনাইমুড়ী গ্রামের, ত্রিশুল সংঘ, হাজীগঞ্জ শহর পূজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, রামপুর বলক্ষার বাজার দুর্গামণ্ডপ, ভদ্রাকালী মন্দির, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গামন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে। লক্ষ্মী-নারায়ণজী আখেরায় আক্রমণ চলাকালে মানিক সাহা নামে একজন মৃত্যুবরণ করেন। একইদিন হাতিয়ার ৭টি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। মন্দিরগুলো হলো-শংকর মার্কেটের আশুতোষ ডাক্তার বাড়রি পূজামণ্ডপ, জগন্নাথ মহাপ্রভুর সেবাশ্রম পূজা মন্দির, রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম পূজা মন্দির, শ্রী লোকনাথ মন্দির পূজামণ্ডপ, তপোবন আশ্রম পূজা মন্দির, গুরুচাঁদ সত্যবামা পূজা মন্দির, হাতিয়া পৌরসভা কালী মন্দির ও এর সাথে ৪-৫টি ঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে। মহাষ্টমীর দিন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুরে সুবল দাসের মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দির ভাঙচুর এবং লুটপাট, একইদিন কুড়িগ্রামের উলিপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, সিলেটে জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার, ভোলা জেলার নবীপুরে বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, নাপোড়া গ্রামে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এদের নেতৃত্ব দেয় মো. সাবের আহমেদ, মো. রিদোয়ান, মো. শামছুল ইসলাম। এরা সবাই শেখেরখীল, গণ্ডামারা, নাপোড়ার বাসিন্দা। এদের হামলায় শেখেরখীল সর্বজনীন মন্দির ধ্বংস হয়েছে, হরি মন্দিরের সামনের সড়কের ২০টি হিন্দুর দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে সুকুমার দাস বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত হয়েছেন সমীর দেব, দুলাল দেব, জুয়েল শীল, লিটন দেব। শেখেরখীল সর্বজনীন মহাশ্মশানের সীমানা প্রাচীর ও মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। নাপোড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সর্বজনীন কালীবাড়ি। নাপোড়া বাজার থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন জহর লাল দেব নামে একজন বর্তমানে ডুলাহাজরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসময় সারাদেশে চলা নৃশংস কর্ম জজ্ঞের কথা জানানো হয়।