সাধারণ মানুষকে ব্যাপকহারে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে

দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ এপ্রিল প্রকাশিত তার আগের দিনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই একদিনেই ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৪৩ জন। যা নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। এ নিয়ে দৈনিক সুপ্রভাত গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি একটি কম আলোচিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে আলোকপাত করেছে। ‘সংক্রমণে জোয়ার টিকায় ভাটা’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি যে-বিষয়টিকে সামনে এনেছে তা হলো, দেশের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশই কোভিড-১৯ এর টিকাগ্রহণ থেকে বাইরে থেকে যাচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হবার সময় নিবন্ধনে খুব চাপ ছিল। ৭ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন করেছিল ১১ হাজার ১৬০ জন। টিকা নিয়েছে মাত্র এক হাজার ৯০ জন। ৮ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ৩০৬ জনে উন্নীত হয় কিন্তু টিকাগ্রহণের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৮৮৮ জন। ১৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৩৭ জন অন্যদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি এটি নেমে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৯০৮ জনে। এতে দেখা যাচ্ছে নিবন্ধনের তুলনায় টিকাগ্রহণকারীর সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি কমে যাচ্ছে নিবন্ধনের পরিমাণও। শুধু তাই নয়, নিবন্ধিত অনেকেই টিকাগ্রহণে উৎসাহী মনোভাব দেখাচ্ছে না তেমন। প্রতিবেদনে আরও যা উঠে এসেছে তা হলো , সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশই নিবন্ধন করা, প্রিন্টকপি সঙ্গে নিয়ে টিকাদানকেন্দ্রে যাওয়াকে ঝামেলাপূর্ণ কাজ মনে করছে। একজন জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ এমনই অভিমত দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, প্রথম দিকে সচেতন মানুষেরাই দৌড়ঝাঁপ করে কিছু টিকা নিয়েছেন। এখন যারা বাকি রয়েছে তাদের মধ্যে ‘অসচেতন’ মানুষের সংখ্যাই বেশি।
এখান থেকে একটি অতীব প্রয়োজনীয় নিরীক্ষণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে টিকাদানে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করে তুলতে সরকারের জোরদার প্রয়াস নেবার কোনো বিকল্প নেই। বিপুল-অধিকাংশ মানুষকে ‘অসচেতন’ বলে কোনোভাবেই যেন এড়িয়ে যাওয়া না হয় বা তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা না হয়। সহজভাবে কমিউনিটি ভিত্তিক নিবন্ধন ও টিকাদানের ব্যবস্থা গ্রহণের পথ ও উপায় অতিদ্রুতই বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই ছোঁয়াচে ব্যাধিটি দায়িত্বে অবহেলা ও সংশ্লিষ্টদের অসতর্কতার পথেই বিস্তার লাভ করে চলেছে।
সচেতর-অসচেতন নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিককে অবশ্যই দুটি ডোজের আওতায় আনার জন্যে সরকারকে সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনের ভেতর থেকে করিৎকর্মা লোকজনের সন্ধান করতে হবে। তাদেরকেই ফ্রন্টলাইনে আনতে হবে। একধরনের অবশ চেতনাসম্পন্ন গণমাধ্যম ও লোকজনের মতামতে প্রভাবিত হয়ে সাধারণ মানুষের ওপর দোষ চাপিয়ে এ অবস্থা থেকে কোনো ফায়দা পাওয়া যাবে না। বরং এ থেকে যে-পরিণাম বা পরিণতি পয়দা হবে নিকট ভবিষ্যতে তা পুরো জাতিকেই সংক্রমিত করবে। এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। এবং তা ভয়াবহতার কোন্ পর্যায় স্পর্শ করতে পারে তা নিশ্চয় সহজেই অনুমেয়।