সরকারি খাল ভরাট করে পার্ক হয় কী করে

কুতুবদিয়া দ্বীপের মধ্যভাগে লেমশিখালী জেটিঘাট থেকে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের আকবরবলী ঘাট পর্যন্ত প্রধান সড়কে ধূরুং বাজারের উত্তর পাশে তিন রাস্তার সংযোগ স্থলে খালের বিশাল অংশ ভরাট করা হচ্ছে। আর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে খাল ভরাটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার। এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। শুধু তাই নয়, ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে এনে খালে ফেলা হচ্ছে। দুটি খননযন্ত্র দিয়ে সেই মাটি খালে বিছানো হচ্ছে।
খাল ভরাটের কারণে স্লুইসগেট বন্ধ হয়ে পানি চলাচলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাতে ধান ও লবণ চাষ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কুতুবদিয়া দ্বীপ হুমকির মুখে। তার ওপর খাল দখলের মতো পরিবেশ বিনাশী কর্মকাণ্ড দ্বীপটিকে আরও বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সাংবাদিককে বলেন, খালের আশপাশে প্রায় সাত শ একর লবণ ও ধানের জমিতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় তিন শ একর ধানের জমি রয়েছে।
কী আশ্চর্য! সরকারি খাল ভরাটের কথা স্বীকারও করেছেন উত্তর ধূরুং ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার। তিনি বলেন, ঘরবাড়ি তৈরির জন্য খাল ভরাট করা হচ্ছে না। এখানে তৈরি হবে দৃষ্টিনন্দন সিটি পার্ক; যেখানে থাকবে বাস টার্মিনাল, যাত্রীছাউনি, টয়লেট ও ফুলের বাগান। জনগণের দুর্ভোগ লাঘব এবং সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সিটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সড়কে নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধুর নামে বড়সড় একটি গেট। মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের বিপরীতে ইতিমধ্যে তিনি ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে ফেলেছেন, আরও টাকা খরচ করবেন।
বাস টার্মিনাল, যাত্রীছাউনি, টয়লেট, ফুলের বাগান নির্মাণের সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা খাল ভরাট করে করতে হবে কেন? আশেপাশে কি সমতল জায়গা নেই? চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে খাল ভরাট করে পার্ক করার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছেন। বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তাও সে বিষয়ে অবগত আছেন। তবে বর্তমান কর্মকর্তা সাংবাদিককে বলেছেন, ‘খালের পরিত্যক্ত একটি অংশ ভরাট করে সেখানে বাস টার্মিনাল ও যাত্রীছাউনি করার মৌখিক নির্দেশনা আগের ইউএনও দিয়েছিলেন বলে জেনেছি। কথা ছিল পরিত্যক্ত অথবা ভরাট খাল খনন করে সেই মাটি দিয়ে এই খাল ভরাট করতে হবে। এখন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে খাল ভরাট করা হচ্ছে কি না, জানা নেই। তা ছাড়া খালের স্লুইসগেট বন্ধ করে পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করারও কথা ছিল না। সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিকর কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তারমানে সরকারি কর্মকর্তারাই সরকারি খাল ভরাটের অনুমোদন দিচ্ছেন। সেখানে জনগণের হতাশ হওয়া ছাড়া তো আর গতি নেই।