সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানবে কে

খাগড়াছড়ি থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামমুখী ‘পদক্ষেপ’ পরিবহনের একটি বাস হাটহাজারী- নাজিরহাট মহাসড়কের চারিয়া ইজতেমা মাঠের সামনে ফটিকছড়িগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে একই পরিবারের তিন শিশুসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। সিএনজি যাত্রীরা চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ফটিকছড়ির শাহনগরে এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন।
এ ধরনের সংবাদ প্রতিদিন পড়তে পড়তে, লাশের ছবি দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। গা সওয়া হয়ে গেছে স্বজনদের বিলাপের দৃশ্য।
কিন্তু আর কত? আর কত প্রাণ ঝরলে আমরা সচেতন হব, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত হয়েছে অনেক আগে।
এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়, দেখা যায় টানা ২৪ ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় ড্রাইভিং সিটে কাটাতে হয় একজন চালককে। যার ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে গাড়ির মালিক, সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে। প্রতি চার ঘণ্টা পর একজন চালককে অবশ্যই বিশ্রাম নেওয়ার সময় দিতে হবে এবং এর জন্য সড়ক ও মহাসড়কের পাশে চালকদের বিশ্রামাগার বানাতে হবে। কোনোভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। প্রত্যেককে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে আরও যা বলা হয়, ওভারটেকিং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম আরেকটি কারণ। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সংকেত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় সংকেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে, যার ফলে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি বের হতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ওভারটেক করা উচিত।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হল ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা। মহাসড়কগুলোতে বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। রাস্তার পাশে হাট-বাজার স্থাপন এবং ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
এছাড়া মহাসড়কগুলোতে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির যানবাহন চলাচল। গতির তারতম্য থাকায় দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ধীরগতির বাহন রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে। তাই মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করা জরুরি।
ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে লেখা হচ্ছে কিন্তু প্রতিকারে বিশেষ উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। ফলে দুর্ঘটনাও কমছে না। কিন্তু লাগাম তো টানতে হবে। সড়ককে নিরাপদ করতে হবে।