শনাক্তে সর্বোচ্চ রেকর্ড :  অশনি সংকেত স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি না হলে পরিস্থিতি : সামাল দেওয়া কঠিন হবে

গত সোমবার থেকে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৮৩৬৪ জন যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ, ৭ এপ্রিল ছিলো ৭৬২৬। রোববার সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ১১৯ জনের, গত সোমবার ১০৪ জনের। চট্টগ্রামে সোমবার মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের, এর মধ্যে উপজেলায় ৬ জন মারা গেছে। চট্টগ্রামে গত সোমবার সংক্রমণের হার ছিলো ২৮ শতাংশের বেশি। গতকাল মৃত্যু ১১২, সংক্রমণ ৭ হাজার ৬শ’র এর বেশি।
রেকর্ড সংখ্যক শনাক্ত ও মৃত্যু ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। করোনার প্রথম ঢেউ ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে শহর এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি দেখা গিয়েছিলো কিন্তু এখন তা দেশের গ্রামাঞ্চলসহ সর্বত্র সামাজিক সংক্রমণের রূপ নিতে চলেছে যা দেশ ও জনগণের জন্য অশনি সংকেত। এখন মৃত্যু ও সংক্রমণের যে পরিস্থিতি তাতে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। বিশেষজ্ঞও স্বাস্থ্য অধিদফতর লকডাউন বা বিধিনিষেধ না মানলে বর্তমান অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে জটিলতার সৃষ্টি হবে বলেও শঙ্কা করছেন। সরকার সীমিত আকারে লকডাউন দিলেও তা মানুষ যথাযথ মানছে না, সেই সাথে প্রশাসন থেকে ঢিলেঢালা নজরদারির ফলে পরিস্থিতির উন্নতিও তেমন পরিলক্ষিত নয়। গণপরিবহন বন্ধ, অথচ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছাড়ছে কিভাবে, আসছেই বা কিভাবে। অফিসÑআদালত, শিল্প কারখানা খোলা অথচ রিকশা ছাড়া অন্যান্য পরিবহন চলছে না তাহলে মানুষের দুর্ভোগের অবসান তো হবে না। ১ জুলাই থেকে ৭ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে; শহরে কিংবা গ্রামে কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে লকডাউন কার্যকর করা যাবে না যদি কমিউনিটি লিডারশিপ গড়ে তোলা না যায়। সরকার জেলায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলা ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রমে সচিবদের দায়িত্ব দেয়ায় সংসদে সরকার ও বিরোধীদলের সাংসদরা সমালোচনা করেছেন। একেবারে তৃণমূলে জনপ্রতিনিধি, এনজিও, ছাত্রযুব, স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ব্রিগেড গঠন না করলে এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণা না চালালে জনগণকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ করার কাজ সফল হবে না। কঠোর লকডাউনের সময় অসুস্থ ব্যক্তি ও রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা এবং গরিব ও নি¤œবিত্তদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওয়ার্ড/ইউনিয়ন/গ্রাম ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এখনো ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে মানুষ ঢুকছে। অন্যান্য দেশ থেকে ও নানা মানুষ আসছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের সদাসতর্ক থাকতে হবে। যারা ঢুকছে তাদের পরীক্ষা করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। কোভিড শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, আইসিইউ, অক্সিজেন প্রাপ্যতাÑএসব বিষয়ে নগর ও উপজেলায় প্রস্তুতি রাখতে হবে। নগরে আগের কোভিড হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টারগুলির সংস্কার এবং এগুলি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত রাখার কাজটি জরুরিভাবে সম্পাদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জুলাই থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার কথা এবং ৮০ শতাংশ জনগণকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছেন। ভ্যাকসিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, মাস্ক পরিধান, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সকল ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, করোনা উপসর্গ দেখা দিলে হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে থাকাÑএসব বিষয় মেনে চললে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।