রাসায়নিকের চারটি কন্টেইনার শনাক্ত

বিএম ডিপো

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্যের চারটি কন্টেইনার শনাক্ত করেছে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল।

সোমবার দুপুরে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ বীর ইউনিটের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম ডিপোতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘চারটি রাসায়নিকের কন্টেইনার শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছে।’

শনিবার রাতে এই ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর থেকে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি রাসায়নিক দূষণ ঠেকাতে কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এক দিন পরও ডিপোর আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি, সোমবারও ডিপোর বিভিন্ন অংশে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার সময় ২৪ একর আয়তনের ওই ডিপোতে ৪৩০০ কন্টেইনার ছিল। তার মধ্যে ৩ হাজার কন্টেইনার ছিল খালি। বাকিগুলোতে ছিল আমদানি করা এবং রপ্তানির জন্য রাখা বিভিন্ন পণ্য।

বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমানের মালিকানাধীন আল রাজী কেমিকেল কমপ্লেক্সের উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইডও রপ্তানির জন্য রাখা ছিল কনটেইনারে। ওই রাসায়নিকই আগুনকে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।

কিন্তু হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছাড়া আর কোনো রাসায়নিক সেখানে ছিল কি না এবং কী পরিমাণ রাসায়নিক সেখানে ছিল, সেসব তথ্য এখনও জানতে পারেননি সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, ‘যে চারটি কন্টেইনার আলাদা করে রাখা হয়েছে, সেগুলোতে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, সে তথ্যও আমরা পাচ্ছি না, কারণ ডিপোর অনেকে হতাহত হয়েছে।’

রোববার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর ২৪ ডিভিশনের ২০০ জনের বেশি সদস্য বিএম ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে বেসামরকি প্রশাসনকে সহায়তা করছে বলে জানান আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। অনেক কন্টেইনারে কাপড় ছিল, আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দেওয়ার পর সেখান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে।

‘আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আমরা কাজ করছি। যদি নতুন করে কোনো কন্টেইনারে আগুন না লাগে, তাহলে দ্রুত নির্বাপন সম্ভব হবে। তবে সেটা কতক্ষণে হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না।’

শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকু- উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বেসরকারি ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। সেখানে থাকা রাসায়নিকের কন্টেইনারে একের পর এক বিকট বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে আগুন ভয়ঙ্কর মাত্রা পায়।

এ ঘটনায় রোববার রাত পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য নথিভুক্ত করেছে জেলা প্রশাসন, তাদের মধ্যে নয়জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী।

ডিপোর ভেতরে আর কোনো মরদেহ আছে কিনা জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, ‘ভেতরে লাশ আছে কিনা, উদ্ধারকারী দল তা দেখছে। নতুন করে যাতে কিছু না ঘটে সেজন্য উদ্ধারকারী দল ও অগ্নি নির্বাপনে নিয়োজিতদের ছাড়া বাকিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. শাহজাহান রোববার ডিপো পরিদর্শন শেষে বলেছিলেন, সেখানে ২৬টি কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল। পাশাপাশি ডিপোর টিনশেডেও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাখা ছিল।

বিস্ফোরণের পর পুরো ডিপোর বিভিন্ন অংশে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের শত শত প্লাস্টিকের জার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে কোন কোন কন্টেইনারে বা ডিপোর কোন অংশের কন্টেইনারে রাসায়নিক আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি ডিপো কর্তৃপক্ষ।

এ কারণে আগুন নিভানোর কাজে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসসহ এ কাজে নিয়োজিত সব সংস্থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা রোববার দিনভর অভিযোগ করেন, কোথায় রাসায়নিকের কন্টেইনার আছে তা ডিপোর লোকজন বলতে না পারায় আগুন নেভানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর মধ্যে রোববার সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল বিএম ডিপোতে কাজ শুরু করে। তারা জানান, ডিপোর নালাটি বাইরের মদনহাট খালের সাথে যুক্ত। এবং খালটি সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে। এ কারণে বিষাক্ত রাসায়নিক খাল হয়ে সাগরে যাওয়া ঠেকাতে তারা কাজ করছেন।
সেনাবাহিনীর ১ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের লে. কর্নেল মুনিরা সুলতানা সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কন্টেইনারের সাথে অন্য কোনো রাসায়নিক ছিল না কিনা তা এখনো জানতে পারেননি তারা।

‘আমরা রাসায়নিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ডিপোর পানি নিষ্কাশনের যতগুলো পথ ছিল, সেগুলো যাতে খালে গিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’

ডিপোর আগুন নেভাতে রোববার ভোরের দিকে পানির সংকটে পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে সেখানে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা দিতে শুরু করে নৌবাহিনীর একটি দল।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. নাজমুল হাসান সোমবার সকালে ডিপো পরিদর্শনে গিয়ে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে অগ্নি নির্বাপনে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।