ব্রিজের অপেক্ষায় দুই ইউনিয়নের মানুষ

ঝুঁকিপূর্ণ সাপমরা খালে বাঁশের সাঁকো

সংবাদদাতা, আনোয়ারা »

‘ভালা গরি ছবি তুলি সরকাররে দাহন আঁরা হত হষ্টত আছি, হত হষ্ট গরি আঁরা দিন হাডাইর, আঁরার পোয়া-মাইয়া হত হষ্ট গরি পরালেহা গরের ইয়েন ভালা গরি ছবি তুলি বিয়াগ্গোনোওে দেহন, আঁরারে চাইবার মতো কেউ নাই, দেশর এত উন্নতি অঁর কিন্তু আঁরার অবস্থার হন রহম পরিবর্তন নর’ (ভালো করে ছবি তুলে সরকারকে দেখান আমরা কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, ছেলেমেয়েরা কত কষ্ট করে পড়াশোনা করছে সেটা ভালো করে ছবি তুলে সবাইকে দেখান, আমাদের দেখার মতো কেউ নাই, দেশের এত উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না)। এভাবে কষ্টের কথা ব্যক্ত করছেন খুশি আক্তার (২৮)। তিনি আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সরেঙ্গা ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নিজের মেয়েকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে, দেখেশুনে পা ফেলে জুঁইদন্ডি ইউনিয়নবাসীর গলার কাঁটা সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি পার হচ্ছিলেন। এমন সময় ছবি তুলতে দেখে নিজেদের দুঃখ দুর্দশার এইভাবেই ব্যক্ত করেন। শুধু খুশি নন। সাপমরা খালের এই বাঁশের সাঁকোটি নিয়ে কষ্টের গল্প শুনিয়েছেন স্কুলছাত্র আরিফ, আদিফুল এবং যুবক আবু সৈয়দসহ দু’পারের অনেকেই।

আদিফুল ইসলাম নামে টি এম সি হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, ছোটো থেকেই এই সাঁকোটা দেখেদেখে বড় হয়েছি। এই সাঁকোটার কারণে বাড়ির পাশের জে কে হাই স্কুলে পড়তে পারি না। অনেক দূরের টি এম সি হাই স্কুলে পড়তে হচ্ছে।

মোহাম্মদ আরিফ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, দূর থেকে দেখলে সাঁকোটা চলাচলের উপযোগী মনে হলেও এতে উঠলেই বুঝা যায় এটা কত ভয়ানক। মাঝখানে গেলে বাঁশের মটমট শব্দে শরীর কেঁপে ওঠে। আমরা যেমন-তেমনভাবে পার হতে পারলেও অনেক সময় ছোটো ছেলেমেয়েরা সাঁকোর মাঝখানে গিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। জানি না কবে আমরা একটা সেতুর উপর দিয়ে এই খালটা নিশ্চিন্তে পার হতে পারবো!

আবু সৈয়দ নামে আরেক যুবক বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সব সময় আমাদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা আমাদের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার বলেছি। ওনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কেন জানি না এই সাঁকোটার এখনো ব্যবস্থা হচ্ছে না। জানি না এই দুর্ভোগের শেষ কোথায়! আমাদের পূর্বপুরুষ ধরে এই কষ্ট সয়ে বেড়াচ্ছি। জানিনা আর কতদিন এই ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হবে!

সরেজমিনে সাপমরা খালের উপর বাঁশের সাঁকোটির দু’পাশ ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের জোড়াতালি দিয়ে বানানো হয়েছে সাঁকোটি। এটি পার হতে যে কারো শরীর কেঁপে উঠবে ভয়ে। সামান্য বেখেয়ালে একটু পা পিছলালেই পড়তে হবে সোজা গভীর খালে। খালের পারকি এলাকায় বাঁধের কারণে পানি সঞ্চালন বন্ধ থাকায় এখন পানি কম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে খালটি। খালটির পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সরেঙ্গা বাজার। তাই প্রয়োজনীয় বাজার করতে প্রতিনিয়ত খুরুস্কুলবাসীর সাঁকোটি পার হয়ে আসতে হয়। আর পূর্ব প্রান্তে প্রাইমামি স্কুল হওয়ায় সরেঙ্গাবাসীদের যেতে হয় খুরুস্কুল প্রান্তে। ছোটো ছেলেমেয়েদের সাঁকোটি পার হয়ে যেতে হয় এপার-ওপার। একপাশ দিয়ে একজন আসলে অপর পাশ দিয়ে আরেকজন আসার কুদরত নাই। পুরো আনোয়ারায় ঘুরে এমন ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতীয় আরেকটা সাঁকোর দেখা মিলবে না।

তাই রায়পুর-জুঁইদ-ি ইউনিয়ন দুটির প্রায় ৪০ হাজার মানুষের একটাই চাওয়া এই সাঁকোটির স্থলে একটা সেতু হওয়া।

রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, সম্প্রতি দুই ইউনিয়নের যাতায়তের মাধ্যম সাপমারা খালের বাঁশের সাঁকো ভেঙে গেয়েছিল যা ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্দেশে দ্রুত মেরামত করা হয়েছে। আমার জানামতে এটার একটা ব্যবস্থা হচ্ছে।

জুঁইদ-ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভূমিমন্ত্রী এটা নিয়ে সেতু মন্ত্রণালয়ে ডেমি অফিসিয়াল লেটার পাঠিয়েছেন। আশা করি শীঘ্রই এটা ব্যবস্থা হবে।

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান জানান, আমাদের কাছে ঢাকা থেকে এটার ইনফরমেশন দেওয়ার বিষয়ে চিঠি এসেছিল, আমরা সব ইনফরমেশন পাঠিয়েছি এবং ব্রিজের জন্য ভূমিমন্ত্রীর সুপারিশপত্রও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, উপজেলার সাপমারা খালে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এলে ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হবে।