বিকল্প উৎস থেকে টিকা পেতে সরকারের জোর প্রচেষ্টা : টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতায় যখন সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখি তখন চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা, আইসিইউ সংকট ও টিকার মজুদ কমে আসা নানা আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। জেলা ও উপজেলায় সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে স্বজনরা ছুটছেন ঢাকা ও বড় বড় শহর অভিমুখে উন্নত চিকিৎসার আশায়। গত ১ সপ্তাহে দেশে মৃত্যুহার ৯০ এর উপরে, সংক্রমণ ৪ হাজারের বেশি। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলিতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যবিদগণ।
করোনার প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত টিকা এবং সংক্রমণের রক্ষাকবচ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা। সরকার সংক্রমণ কমাতে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বিধিনিষেধ আরোপ এবং ১৪ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী লকডাউন মেনে চলতে কাজ করছে কিন্তু জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালাভাব পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। মাস্ক পরতে এখনো অনাগ্রহ, জনসমাগম বা ভিড় এড়াতে জনগণের অসচেতনতা, অনীহা, গণপরিবহন ছাড়া অন্যান্য পরিবহনে গাদাগাদি করে চলা ইত্যাদি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগামী দিনগুলোয় করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
এদিকে সরকারের টিকাদান কর্মসূচি গত ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের টিকাদান অব্যাহত রয়েছে কিন্তু টিকার মজুদের যে অবস্থা তাতে মে মাস পর্যন্ত টিকাদান চলতে পারে যদি এ সময় টিকা পাওয়া না যায়- এমন খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এ পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্টোজেনেকার ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে, তাদের প্রতিশ্রুত ৩ কোটি ডোজ টিকার চালান পর্যায়ক্রমে আসার কথা থাকলেও ভারত থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ রয়েছে দেশটির নিজস্ব চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ভারতে ভ্যাকসিন সংকট থাকলেও শিগগিরই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করা হবে। করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে দ্রুত টিকা পাওয়ার আশা নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার নানা উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে, ইতিমধ্যে রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে তাদের করোনার টিকা স্পুতনিক ভি উৎপাদনের ব্যাপারে দুই দেশ একটি চুক্তিও করেছে। পাশাপাশি সে দেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবেও টিকা কিনবে বাংলাদেশ, এসব কথা গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার জন্য জরুরি টিকার মজুত গড়ার উদ্যোগে চীনের দেওয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এ উদ্যোগে আছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা মর্মে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। সরকার জরুরি ভিত্তিতে টিকা ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়াদির ব্যাপারে একটি উচ্চ পর্যায়ের কোর কমিটি করেছে। কমিটি কাজ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, মজুদ টিকার মেয়াদ আছে জুন পর্যন্ত, টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে দৈনিক টিকাদানের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হবে তবে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণকারীরা যাতে নির্ধারিত সময়ে টিকা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটসহ নানা উৎস হতে টিকা সংগ্রহে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
ঢাকা ও বড় বড় নগরীর ওপর রোগীর চাপ কমাতে জেলা ও উপজেলায় আইসিইউ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। এখন জাতীয় দুর্যোগে কোনোরূপ অদক্ষতা বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সমন্বয়হীনতা কাম্য নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে কিংবা সামাল দেওয়া কঠিন-এসব মন্তব্য না করে বিপদ মোকাবেলা করতে সর্বশক্তি নিয়োগ এবং সকল ধরণের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখাই আসল কাজ।