চন্দনাইশে সবুজে ছেয়ে গেছে পুদিনা

লকডাউনে দাম নিয়ে শঙ্কা

মো. নুরুল আলম, চন্দনাইশ »

পুদিনা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। সুগন্ধি জনপ্রিয় পুদিনা পাতা ওষুধি হিসেবে বহুল প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। তরি-তরকারিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীতে সুগন্ধ ছড়াতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। রমজান মাসে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পুদিনা চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হলেও করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে পুদিনা পাতা বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় উপজেলার কয়েক শতাধিক কৃষক। দেশে ধারাবাহিক লকডাউন চলতে থাকায় পুদিনা চাষীদের বিক্রি শুধু চন্দনাইশে সীমাবদ্ধ। যদি চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসতো, তাহলে আরো বেশি লাভবান হতো পুদিনা চাষীরা।

বাজারে পুদিনা পাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও মেলে আশানুরূপ। স্বল্প সময়ে বেশি লাভ পাওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে পুদিনার আবাদ। চন্দনাইশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পুদিনার আবাদ করা হয়েছে। গত বছর এতে লাখ টাকা আয়ও করেছেন অনেকে, কিন্ত এবছর হয়নি করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ সকল গুণাবলী ও স্বাদের কথা মাথায় রেখে পবিত্র রমজান মাসের কথা চিন্তা করে চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টরের অধিক জমিতে ব্যাপক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে চন্দনাইশ পৌরসভা, দোহাজারী, হাশিমপুর, গাছবাড়িয়া, কাঞ্চননগর ও উপজেলা সদরসহ পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক হারে পুদিনার চাষ করা হয়েছে।

তবে আশানুরোপ বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম শঙ্কায় পড়েছেন তারা। সরেজমিন দেখা যায়, চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া, হাশিমপুর, দোহাজারী ও কাঞ্চননগর এলাকার উঁচু বিলগুলোতে ব্যাপকভাবে পুদিনার আবাদ করা হয়েছে। এসব এলাকার কৃষক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ক্ষেত থেকে পুদিনা পাতা তুলছেন, কেউ ছোট ছোট আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ আঁটি বাঁধা পুদিনা বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারসহ নানা ধরনের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

তারই ধারাবাহিকতায় এবারও চন্দনাইশ পৌরসভার দক্ষিণ গাছবাড়িয়া হরিণার পাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকা জুড়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সুগন্ধি পুদিনার চাষ করেছেন পুদিনার সফল চাষী হিসেবে পরিচিত মো. আবদুর রউফ, মো. আবু তৈয়ব, আবদুল ছমদ, মাহাবুব, আছহাব মিয়া (ভূট্টো), শামসুল ইসলাম, এমরান হোসেন ও ফারুখ।

তারা জানান, আমরাও এই অঞ্চলের কৃষকরা মূলত রমজান মাসের কথা চিন্তা করে পুদিনার চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রতিবছরের মত এই বছরও বাণিজ্যিকভাবে এলাকায় প্রায় ১০ কানি জায়গায় পুদিনার চাষ করেছি। এতে শ্রমিক ও বিভিন্ন বাবদ একেক জনের প্রায় খরচ হয়েছে প্রায় ২০-৩০ হাজার টাকা। বাজার দর ভাল হলে একেক একেক জনের প্রায় ৫০হাজার-১লাখ টাকার পুদিনা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছে। তবে বর্তমানে সারাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তাই লকডাউনের ফলে বাইরে থেকে পাইকার না আসলে আমাদের চাষকৃত পুদিনা ক্ষেতেই নষ্ট হতে পারে। তারপরও চন্দনাইশ উপজেলাজুড়ে আমরা পুদিনা বিক্রি করছি।

চট্টগ্রামের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী আবদুল গফুর ও বাচা মিয়া জানান, সারা বছর পুদিনার চাহিদা রয়েছে। নগরীর উন্নত মানের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে চাটনি, জুস, সালাদ তৈরিতে এবং ফুড ডেকোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যে সুগন্ধের জন্য পুদিনা ব্যবহার করে থাকে। বেকারি পণ্যেও পুদিনার ব্যবহার রয়েছে। প্রত্যেক বছর তারা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পুদিনা সরবরাহ করেন কিন্ত এবছর তা কমে গেছে। তারা আরও জানান,  এবছর আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবো না।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, এখানকার ভূমিতে ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতা চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। এবারও অধিক লাভের আশায় শুধু দক্ষিণ গাছবাড়িয়া হরিণার পাড়া এলাকায় অন্তত ১০ কানি জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন ১০/১৫ জন কৃষক।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রাণী সরকার জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টর জায়গার উপর ঔষধি উদ্ভিদ  পুদিনা পাতার চাষ করেছেন, হেক্টরে ফলন হয়েছে প্রায় ৮-১০ টন। স্থানীয়ভাবে পুদিনার অনেক চাহিদা, তবু বাইরের পাইকাররা আসতে পারলে কৃষকরা আরো বেশি দামে পুদিনা বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো। আরো ব্যাপকভাবে এবং সারা বছর পুদিনা চাষ করা গেলে কৃষক আরো অধিক লাভবান হবেন। এ জন্য আমরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। ব্যাপকভাবে পুদিনা উৎপাদন করা গেলে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।-যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।