বাড়ছে লবণের দাম

আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক »

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে একেকদিন একেক পণ্যের দাম বাড়ছে। কোন কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না পাগলা ঘোড়ার লাগাম। চাল, ডাল, সবজি, চিনির পর এবার বাড়ছে লবণের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি বাড়ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। আর খোলা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় ৬০০ টাকা বেড়ে ৭৪ কেজির বস্তা ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবণ ব্যবসায়ী ও মালিক সমিতি চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের ঘাটতিতে দায়ী করলেও বিসিকের দাবি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে, দেশে বর্তমান কোন লবণের ঘাটতি নেই।

হঠাৎ লবণের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাজী লাল মিঞা সল্ট ক্র্যাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এক মাসের ব্যবধানে ৭৪ কেজি বস্তাপ্রতি ৬শ’ টাকা বাড়ছে আরো বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। যার মূলত কারণ হচ্ছে আমাদের বার্ষিক চাহিদা হচ্ছে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি আছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন। তার ভিতরে চলতি বছর ৩০ জুন দেড় লাখ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। যা আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আমদানি হয়েছে। বর্তমানে আরও ৪ লাখ টন বাজারে ঘাটতি রয়েছে যার কারণে লবণের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত লবণ বিক্রি করছি। পুরো বাংলাদেশে ২৩০ টি মিলকে আমদানি করার অনুমতি দিয়েছিল। আমদানিকৃত মালও শেষের দিকে যার কারণে লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর ভিন্ন সুর। বিসিকের চট্টগ্রাম জেলার উপমহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে কক্সবাজারের ৭টি উপজেলায় ৯৫% ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৫% লবণ চাষ হয়। তিনটি সেক্টরের উপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা, পানি ও লবণাক্ত মাটি। সিত্রাংয়ের কারণে লবণ চাষে সাময়িক অসুবিধা হয়। নতুন লবণ আসতে একটু দেরী হবে। এই কারণে মার্কেটে বাড়তে পারে। তবে গুজবও থাকতে পারে। দেশের বিভিন্ন পণ্য বাড়ছে, অসাধু চক্ররা সেই সুযোগে লবণের দামও বাড়াচ্ছে। তবে মার্কেটে লবণের ঘাটতি নেই। লবণের কোন সংকট নেই, লবণের অভাব নেই, কোন ঘাটতি নেই। আমার তিনজন লোককে আজকে বাজার তদারকিতে পাটিয়েছি।’

‘দেশে ৪ লাখ টন ঘাটতি’ লবণ ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি অতিরিক্ত লবণ কিনে স্টক করে রাখে তাহলে তো বলতে পারছি না। দেশে লবণ সংকট হওয়ার কথা না। তাদের এসব বিষয়ে কোন রিস্ক নেব না। ৩৮ টাকা লবণ দেখিনি। এক দোকানে দেখলাম ৩৮ টাকা বিক্রি করছে। তবে বলতে পারি দেশে লবণের কোন সংকট নেই। প্রচুর লবণ আছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে নতুন লবণ বের হবে।

ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ বলেন, ‘নভেম্বর ডিসেম্বরে আমাদের দেশে লবণের দাম বেড়ে যায়। এটি আমাদের ট্রেডিশন। আমাদের দেশে উৎপাদকদের কাছে কিছু লবণ আছে। উৎপাদক বা ব্যবসায়ীরা যদি বেশি লাভের আশায় সিন্ডিকেট করে লবণকে সাপ্লাই না দিয়ে রেখে দেয়, অন্যদিকে লবণ ব্যবসায়ীরা যদি আমদানি করে লবণ বিক্রি করে তাহলে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের চাষিরা। এখন চাষিরা চিন্তা আজ ১ হাজার হলে, আগামীতে ১২শ’ হবে এই আশায় লবণ রেখে দেয়। যেখানে সরকার শিল্পকে বাঁচানোর জন্য কম আমদানি করে নিজ দেশের চাষিদের সুযোগ করে দিচ্ছে সেখানে ব্যবসায়ীরা, উৎপাদকরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে সরকারকে বিভ্রান্তে পেলার চেষ্টা করে তাহলে তো দুঃখজনক বিষয়।’ এই দাম বাড়ার পিছনে উৎপাদক, মধ্যস্বত্ব কারবারীসহ ব্যবসায়ীরা দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরল কবির বলেন, ‘মিটিং দিয়েছি। আমাদের লবণের চাহিদা যতটুকু, তা মধ্যে উৎপাদনের পর ঘাটতি ছিল ৫ লাখ মেট্রিক টন। আমদানি করতে সুযোগ দিয়েছে দেড় লাখ মেট্রিক টন। আর সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন দেয়নি। কালকেও বসছি। বিসিক কি করে জানি না। তারা বলছে উৎপাদনে যাচ্ছে। উৎপাদন হয়ে নতুন মাল আসতে আরো তিন মাস আছে। ফেব্রুয়ারিতে নতুন মাল আসবে। এই উৎপাদনের মাল কতটুকু আসবে তা দেখে বিবেচনা করবে বলছে। দাম বাড়ার একটি কারণ কাঁচামালের অভাবে দামটি বাড়ছে। আমাদের উৎপাদন হয়ে মাল বাজারে আসবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ক্রুড লবণের সংকটে বর্তমানে ৯০ শতাংশ লবণের মিল বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করছে। তারা এসব সোডিয়াম সালফেট বাজারে প্যাকেটজাত করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বিক্রি করছে। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’

উৎপাদক ও মধ্যস্বত্ব কারবারীদের সিন্ডিকেটে বাজার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি ভুল। হয়তো উৎপাদকদের কাছে কিছু মাল থাকতে পারে। লবণের বাজার তদারকিতে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।’

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চাষিদের হাতে কোনো লবণ মজুত নেই। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে প্রায় ৪৮ হাজার টনের মতো লবণ মজুত রয়েছে। আর মিল মালিকদের কাছে প্রায় ১ লাখ টনের মতো লবণ মজুত রয়েছে। এসব লবণ দিয়ে নতুন মৌসুমের লবণ আসা পর্যন্ত বাজারের চাহিদা মেটানো যাবে না।

অন্যদিকে কাঁচামালের সংকটের কারণে দেশের ৯০ শতাংশ লবণ মিল বন্ধ রয়েছে।