বায়ু দূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

গত মঙ্গলবার বায়ুদূষণের ওপর ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট-২০২৩ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডের বায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ার। ১৩৪টি দেশ ও অঞ্চলের ৩০ হাজারেরও বেশি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের সংগ্রহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে। ইরান এবং আফ্রিকার দেশ শাদকে হারিয়ে প্রথম স্থানে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের। আর তৃতীয় অবস্থানে ভারত। বোঝা যাচ্ছে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রেও উপমহাদেশের তিন দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা (?) চলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫- এর উপস্থিতি বিবেচনায় এই বায়ুমান নির্ণয় করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। আর পাকিস্তানে ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রামে। যদিও এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশকৃত মান ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি নয়।
অন্যদিকে দূষিত বাতাস নিয়ে দিল্লি শীর্ষে অবস্থান করলেও ঢাকা আছে তৃতীয় স্থানে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতে বায়ুদূষণ বেড়েছে। একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে ধরা হয়। এদিকে ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে বস্তুকণা (পিএম ১০ ও পিএম ২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর। গত সাত বছরের তুলনায় গড়ে শতকরা প্রায় ১৫ দশমিক ২৫ বেড়েছে। চলতি বছরে বায়ুমান সূচকে ঢাকার গড় নম্বর (স্কোর) ছিল ১৭১। এ সময় ৩৫৮ দিনের মধ্যে ১৩ দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ু ছিল, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
২০১৬ সালের পর থেকে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে প্রধানত ছয়টি উৎস থেকে বায়ুদূষণ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে নির্মাণকাজ থেকে। এরপর বিভিন্ন কারখানা ও ইটের ভাটা থেকে। যানবাহন থেকে, বর্জ্য পোড়ানোর কারণে এবং গৃহস্থালি থেকে। বৃষ্টিপাত যখন থাকে না বা কম হয় তখন এই দূষণ বেশি হয়ে থাকে।
বায়ুদূষণে শীর্ষে থাকা দেশের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন পরিবেশবিদগণ। তাদের মতে, আমাদের দেশের মানুষের আট বছর করে আয়ু কমছে বায়ুদূষণের কারণে। ফলে এটা নিয়ে আর কোনো আপস করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তারা। কাজেই বায়ু দূষণ রোধে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।