বাড়ছে চালের দাম

রাজিব শর্মা »

সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে চালের চাহিদা কম থাকে। এর ফলে রোজায় সব ধরনের চালের দাম থাকে স্থিতিতে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। ধানের এক মওসুম শেষ হলে আরেক মওসুম শুরু হতে সময় লাগবে আরও কিছুদিন। এদিকে আমদামি কম সরবরাহ অপর্যাপ্ত ও খরচ বাড়তির অজুহাতে সকল ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে মিলার, মোকাম মালিক ও আড়তদাররা।

শনিবার নগরীর অন্যতম চালের আড়ত খাতুনগঞ্জের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং পাহাড়তলী বাজারের চাল আমদানিকারক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১০ বছরে রমজানে কখনো চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু এবছর চালের আমদানি কম হওয়ায়, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বাড়তির প্রভাবেই চালের দাম বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জের রাজাখালী, নতুন চাক্তাই রোডের চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম প্রকারভেদে ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় ১০০ থেকে ১৩৫ টাকা আর ২৫ কেজি ওজনের বস্তায় ৬০ থেকে ৮৫ টাকা বেড়েছে।

খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়ে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ২৪৫ টাকা পর্যন্ত। শনিবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি সরু মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৭২ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। আর লতা ও পাইজাম জাতের  মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। স্বর্ণা, ইরি ও চায়না জাতের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আর কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেড়ে ব্রি ২৮ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা যা এতদিন বিক্রি হয়েছিল ৪৯ থেকে ৫১ টাকা।

এদিকে রমজানের মাঝামাঝি সময়ে মানুষের ব্যস্ততার মাঝে কিছু অসাধু আড়তদার ও মোকাম মালিকরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাজার থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ক্রেতা ও খুচরা চাল বিক্রেতাদের।

বকসিরহাট মুদির দোকানে চাল কিনতে আসা মো. আমিনুর রহমান বলেন, গত মাসে ৫০ কেজি ওজনের যে চালের বস্তা কিনেছি  ২ হাজার ৮৬০ টাকা তা এখন বলছে ৩ হাজার ৫০ টাকা।

বকসিরহাটের খুচরা চাল বিক্রেতা নুরুল আবছার সওদাগর বলেন, মিল মালিক ও আড়তপর্যায়ে গত তিন থেকে চার দিন ধরে পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। জানুয়ারিতেও মিলারেরা চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, সরকারের চাপে পড়ে পিছিয়ে যায় এসব অসাধু ব্যবসায়ী। এখন হয়তো রোজার ব্যস্ততার ফাঁকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী এমন মন্তব্য করেন।

চাক্তাই এর পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রির প্রতিষ্ঠান মাসুম এন্টারপ্রাইজের মালিক  মো. শরিফুর রহমান  বলেন, চালের দাম মোকামে বেড়েছে শুনেছি। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেই অনেক সাধারণ মানুষ ভাত ও ডালকে খাাবার হিসেবে বেছে নিয়েছে। অন্যান্য বছর এসময় চালের চাহিদা কম থাকে কিন্তু এবছর বেড়েছে। যার ফলে মোকাম ও মিলাররা কারসাজির চেষ্টা করছে। প্রশাসনের তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।

চাক্তাইয়ের অন্তু রাইস এজেন্সির ম্যানেজার বলেন, আমরা মিলার থেকে কমিশনে চাল বিক্রি করি। তার যেভাবে দর নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে আমাদের বিক্রি করতে হয়। সব ধরনের চালের দাম বাড়েনি। সরু চালের দাম বস্তায় ১৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। কেন বেড়েছে, প্রকৃত কারণ হিসেবে মিলাররা  ধান সংগ্রহে সংকট ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার বিষয় উল্লেখ করছে। যার ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে দর নির্ধারণ করছে বলে জানান মিলাররা।

এদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোন চাল খালাস হয়নি। গত আট মাস ধরে এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে চাল আমদানি হয়নি।

খাতুনগঞ্জের রাজাখালি রোডের বেশ কয়েকজন চালের মিলার ও আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ধান সংগ্রহ কম হওয়া কারণে এবং সাময়িক বাজার সংকটের কারণে চালের যর ফলে দাম ওঠানামা করছে।

পাহাড়তলী বাজারের চাল আমদানিকারক হারুনুর রশিদ বলেন, দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে। আমরা তাদের থেকে পাইকারি কিনি। তার মধ্যে রমজানে ট্রাক ড্রাইভার ও শ্রমিকের মজুরিসহ পরিবহন খরচ বেড়েছে। সব হিসেব করে আমাদের বিক্রি করতে হয়।

খাতুনগঞ্জের একটি চালের মোকামের ম্যানেজার মো. জামাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আজ (শনিবার) চালের দাম একটু বেড়েছে। এসব চাল নওগাঁ থেকে কেনা দরে বেশি পড়েছে।  তার মধ্যে আগে যে ট্রাকে ২৫ হাজার টাকায় চাল আনা যেত এখন তা বেড়ে ২৯ থেকে ৩১ হাজার টাকা।