বাঁকখালী নদী রক্ষায় গাফিলতি সচিবসহ ১৬ জনকে আইনি নোটিশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী রক্ষায় হাইকোর্টে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও প্যারাবন কেটে নদী দখল, কক্সবাজার পৌরসভার সমস্ত আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষণ অব্যাহত রাখা এবং পূর্বের দখলদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ৫ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১৫ সরকারি কর্মকর্তা এবং এক জনপ্রতিনিধিকে আদালত অবমাননার নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
নোটিশে বলা হয়েছে, দ্রুতসময়ের মধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিপালন করে বাঁকখালী নদীতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে আদালতের সকল আদেশ প্রতিপালন করে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে এবং নদী ও নদী সংলগ্ন প্যারাবনে নির্মিত ও নির্মিতব্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসাথে কক্সবাজার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বদর মোকাম এলাকার কস্তুরা ঘাট নামক স্থানে এ নদীতে বিদ্যমান প্যারাবন সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ইতোমধ্যে উল্লেখিত প্যারাবনের যে ক্ষতিসাধিত হয়েছে তা নিরূপণ সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও প্যারাবনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্যারাবন উপযোগী বৃক্ষের দ্বারা বনায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ ১৬ জুন সকাল ১০টার মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসহাসানুল বান্না ১৩ জুন ডাকযোগে ১৫ সরকারি কর্মকর্তা ও এক জনপ্রতিনিধির কাছে এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মুফিদুল আলম ও কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমুলহুদা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান।
বেলার পক্ষ থেকে দেওয়া নোটিশে আরো বলা হয়েছে, কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত বাঁকখালী নদীকে সংরক্ষণ করতে ও অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে নদীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০১৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আতাউর রহমান খান এর সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ বাঁকখালী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া চিংড়ি অথবা তামাক চাষের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত নদীর যে কোনও অংশ বা নদীর তীর কাউকে ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশ গত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং সি এস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার ও দূষণকারীর হাত থেকে কেন নদীকে সংরক্ষণ করা হবে না এই মর্মেও রুলনিশি জারি করেন।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি মামলার শুনানিকালে আদালত কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রকে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য না ফেলতে নির্দেশ প্রদান করেন। একই সাথে বর্জ্য ফেলার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা কোন অবস্থাতেই পৌর এলাকা বা অন্য কোন এলাকা, নদী বা খালের পরিবেশের ক্ষতি করবে না এবং অবিলম্বে বাঁকখালী নদীতে ফেলাবর্জ্য অপসারণ শুরু করতে এবং নিজ খরচে নদী পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের এ রকম সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বাঁকখালী নদীতে এখন ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রয়েছে। রয়েছে নদী দখলের প্রতিযোগিতা যা সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বাঁকখালী নদী বর্তমানে দখল ও দূষণে জর্জরিত। নদীর তীরে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে নির্মাণ চলমান রয়েছে। ক্রমশই বাড়ছে নদীর দখলদার। সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভার বাঁকখালী নদী সংলগ্ন কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন কেটে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। অধিকন্তু নদী হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ব্যক্তি নামে রেকর্ড করা হয়েছে যা দেশের বিচারব্যবস্থার উপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচায়ক।