ফিরছে মঙ্গল শোভাযাত্রা

চারুকলায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি

আশরাফুন নুর »

ক’দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। বাঙালির নতুন বছরের শুরু। পুরোনো জরা ধুয়ে মুছে নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এদিকে নানা আয়োজনে বৈশাখ বরণে ব্যস্ত সময় পার করছে চট্টগ্রাম চারুকলা

ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে সরাই, কাগজ, কাপড়সহ নানা উপকরণে নকশার কাজ চলছে পুরোদমে। চারুকলার নবীন, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা মিলে এসব প্রতীক ও বিভিন্ন সাজ-সরঞ্জাম তৈরি করছেন। এই কর্মযজ্ঞের অর্থের সংস্থানও হয় মুখোশ ও সরা বিক্রি থেকেই। শিক্ষার্থীদের চিত্রিত সরা, মুখোশ, কাগজের লোকজ মোটিফসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি করা হচ্ছে সুলভ মূল্যে।

মহামারির কারণে গত দুবছর হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার মহামারির প্রকোপ থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলা নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটে।

মহামারির কারণে দুই বৈশাখ পর এবার পরিচিত আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে। উৎসবকে বর্ণিল করে তুলতে আয়োজকরা সেরে নিচ্ছেন শেষ দিকের প্রস্তুতি।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, আয়োজনে শিক্ষকদের পক্ষে শিল্পকর্ম গড়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রনব মিত্র চৌধুরী। এবারের স্লোগান ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৫১তম ব্যাচের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব শাহরিয়ার বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ^বিদ্যালয় বন্ধসহ নানা কারণে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ একটু দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। তবে কাজ প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া আর্থিক সঙ্কটের বিষয় বিবেচনা করে বেশি বড় পরিসরে করার কথা ভাবছি না। তবে প্রনব মিত্র স্যার আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে তদারকের দায়িত্বে আছেন ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।’

তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা শুরু হবে। এটি কাজীর দেউড়ি-লাভলেইন-চেরাগী পাহাড়-জামালখান হয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হবে। এবার রজমান মাস হওয়ায় বিকাল ৫টার মধ্যে আমাদের কার্যক্রম শেষ করবো। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জা¡লন ও ফানুস উড়ানো হবে।’ মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রমে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সুব্রত দাশ বলেন, ‘গত দুই বছরে সবকিছু স্তিমিত হয়ে পড়ার কারণে এই অল্প সময়ে এ বছর বড় পরিসরে করা সম্ভব না। তবুও শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নিয়েছে, যতটুকু সম্ভব তারা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারবে বলে আশা করছি। আমরাও শিক্ষার্থীদের যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রনব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সকাল ১০টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের গেট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করবো। এটি কাজীর দেউড়ি, লাভলেইন, চেরাগী, জামালখান হয়ে ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হবে। দুপুর ২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষার্থীরা ফেস্টুন, মুখোশ ও নানা ধরনের নকশাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। যতটুকু সম্ভব তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। দুই বছর পর আবার সেই আমেজ ফিরে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার কার্যক্রম শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। তাই বড় পরিসরে করা না হলেও সীমিত পরে হলেও উৎসব সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।’