পানি সরবরাহে আট হাজার কোটি টাকা খরচের পরও সংকট

চট্টগ্রাম ওয়াসা

নগরে পানি সরবরাহের জন্য গত এক দশকে তিনটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি। এতে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৮ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না শহরের সব মানুষ।
নগরের উত্তর মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ খুলশী, জালালাবাদ, শেরশাহ্, আমবাগান, বিশ্বকলোনি, বালুচরা, আমানবাজার, পূর্ব বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলী, শুলকবহর, পূর্ব ষোলোশহর, লালখান বাজারের পোড়া কলোনিসহ নানা এলাকায় নিয়মিত ওয়াসার পানি যায় না। দিনে ঘণ্টা দু-এক কখনো থাকে, কখনো তাও থাকে না। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ পতেঙ্গা, বালুচরা, আমানবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনো ওয়াসার লাইনই পৌঁছায়নি। বিষয়টি একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় দৈনিকে উঠে এসেছে।
নির্দিষ্ট এলাকায় সংযোগের অভাব ও পানিসংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, উঁচু এলাকা এবং দ্রুত নগরায়ণের কারণে বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি হালদা নদীতে পানি কমে যাওয়ার কারণে উৎপাদনও কমে গেছে। তাই পানি নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে প্রান্তিক এলাকায় পানি দেওয়ার জন্য আরও একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
গত দশ বছরে চট্টগ্রামে পানির উৎপাদন অন্তত চারগুণ বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদীর পানির ব্যবহার আশাব্যঞ্জকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে পানির মান।
বছর দশেক আগে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির উৎপাদন ছিল ১৫/১৬ কোটি লিটার। পরিবেশ এবং প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হলেও নগরবাসীর চাহিদা মেটানোর জন্য ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতো ওয়াসা। ৯৬টি ডিপ টিউবওয়েলের মাধমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হতো। এর পাশাপাশি মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার পানি পাওয়া যেত। নগরজুড়ে পানির হাহাকার ছিল চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু নগরীর বহু এলাকায় এখনো পানি পৌঁছেনি। পানির উৎপাদন বাড়লেও নগরীর হাজার হাজার মানুষ পানি না পাওয়ার অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছেন। ওয়াসার পক্ষ থেকে নগরীর প্রতিটি ঘরে পানি পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে এজন্য আরো বছর কয়েক অপেক্ষা করতে হবে।
নগরবাসীর পানির চাহিদার শত ভাগ পূরণে ওয়াসাকে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একসময় নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও পানি পাওয়া যেত না। এখন সে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ইতিমধ্যে পানি সরবরাহের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ঘরে ঘরে ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আরও কিছু প্রকল্পের উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা ঠিকঠাকভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।