দক্ষিণ চট্টগ্রামে মৎস্য বিপ্লব

স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষিরা

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা

মৎস্য চাষীদের নিরাপদ মাছ চাষ, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও আর্থিকভাবে লাভবান করতে এবং পুকুর ও পুকুর পাড়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে মৎস্য চাষ করতে পিকেএসএফ’র আর্থিক ও কারগরি সহযোগিতায় মমতার মৎস্য খাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী, পটিয়া উপজেলায় রীতিমতো মৎস্য বিপ্লব হতে শুরু করেছে। স্বল্প খরচের অধিক লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই কার্প-মলা-তেলাপিয়া মিশ্র চাষে মৎস্য চাষীদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। সেই সাথে স্বাভলম্বী হচ্ছে এই মৎস্য খাতের মাধ্যমে উপকারভোগীরা।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর থেকে মমতা মৎস্য খাতে উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। সেই থেকে এই খাতের মাধ্যমে মাছ চাষের প্রদর্শনী স্থাপন, মাছ চাষের উপকরণ বিতরণ, মাছ চাষ বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, মৎস্য সেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র বাস্তবায়ন, মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এই খাতের উপকার ভোগীর সংখ্যা হলো ৪৭৯ জন।
উপকারভোগী কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের এমরান বলেন, আমার মাছ চাষ খুবই আগ্রহ ছিল, তবে কিভাবে চাষ করবো বুঝতেছিলাম না। পরে মমতা’র মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের সাথে যোগাযোগ করি এবং মমতা’র মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী মমতা’র সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচি হতে ঋণ গ্রহণ করে ৪৫ শতাংশ পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল ও তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করি। এই পদ্ধতিতে চাষ করি আমি ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। আমার দেখাদেখিতে এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়ন কাজল সর্দার বলেন, আমি মাত্র ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। প্রথমে দু’টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করলেও লাভের মুখ দেখতে পাইনি। পরবর্তীতে মমতা’র মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইউনিটের সাথে যোগাযোগ করি এবং মমতা’র মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী মমতা’র মৎস্য খাতের আওতায় উত্তম ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে সে অনুযায়ী মাছ চাষ করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।
মমতা’র মৎস্য কর্মকর্তা আবিরুল ইসলাম জানান, গতানুগতিক মাছ চাষের পরিবর্তে আমরা আদর্শ মৎস্য চাষের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেগুলো হল- উত্তম ব্যবস্থাপনায় কার্প-মলা-তেলাপিয়া-মিশ্র চাষ, উত্তম ব্যবস্থাপনা কার্প-গলদা মিশ্র চাষ, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে দেশি শিং ও মাগুরের মিশ্র চাষ, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে পাবনা-গুলদা/ টেংরা মিশ্র চাষ, ফিশিং গিয়ার তৈরি ও বিপণন, কার্প ফ্যাটেনিং, উচ্চ মুল্যের চিতল/শোল/আইর-কার্প মিশ্র চাষ, অফ ফ্লভার মুক্ত পাঙ্গাশ মাছ চাষ, মাছের পোনা চাষ, বাহারি মাছের চাষ, অনুপুষ্টি সম্পন্ন দেশীয় ছোট প্রজাতির মাছ চাষ, মলা মাছের ব্রুড ব্যাংক, উত্তম ব্যবস্থাপনায় সদস্য পর্যায়ে উৎপাদিত মাছ বিনা কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। এসব পদ্ধতি মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং দিন দিন মানুষের মাঝে এই পদ্ধতিগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মমতা’র প্রধান নির্বাহী রফিক আহামদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি কৃষক বা খামারির দক্ষতা উন্নয়নে মমতা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন’র (পিকেএসএফ) সহায়তায় কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও পটিয়াতে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন উদ্যোক্তারা মমতা’র নতুন পদ্ধতি মৎস্য চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে বলে জানান তিনি। আমরা সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছি।
মমতা’সহ মৎস্য খাতে বাংলাদেশর এনজিওগুলোর ভূমিকা এবং কার্যক্রম নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, বাংলাদেশ সরকার মৎস্য খাত উন্নয়নে নানামুখী প্রদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। করোনাকালে মৎস্য প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সময়ে মৎস্য চাষী এবং জেলেদের আর্থিক সহয়তা করে যাচ্ছেন। মাছ চাষে চাষীদের দক্ষতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করছেন। সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গুলোও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে নানা কর্মকা- পরিচালনা করে যাচ্ছে। দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও গুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানান।