তালিকা হচ্ছে ‘বিতর্কিত’ পুলিশ কর্মকর্তাদের

পুলিশে ‘শুদ্ধি অভিযান’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকা-ের পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। এ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ‘বদলি আতঙ্ক’ দেখা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সিনহা হত্যাকা- নিয়ে জনমনে পুলিশের যে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মুক্তি পেতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি তালিকা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে একই থানায়, ফাঁড়ি বা দপ্তরে কর্মরত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা দের। শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত ৭০০ কনস্টেবল এবং ২৯ ইন্সপেক্টরকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশে কর্মরত ২৮৫ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেয়ার পর নগর পুলিশে বিতর্কিত এবং অদক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সরানো শুরু করেছেন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে একই থানা, ফাঁড়ি বা দপ্তরে কর্মরত তাদের তালিকা সংগ্রহ করছেন তিনি। খোঁজ করছেন দক্ষ ও যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কথাও বলছেন পুলিশ কমিশনার।
‘শুদ্ধি অভিযানের’ অংশ হিসেবে সিএমপিতে বিতর্কিত অফিসারদের সরিয়ে সৎ ও দক্ষ অফিসার পদায়ন শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ৫৯ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করেছেন সিএমপি কমিশনার। এর আগে বিস্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠা নগর পুলিশের রিজার্ভ অফিসের আরআই সাব-ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলামকে বদলি করেন পুলিশ কমিশনার। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এসআই বদিউল। এর আগে গত সোমবার সরানো হয়েছে আকবরশাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডবলমুরিং থানার ওসি (তদন্ত) জহির হোসেন। মোস্তাফিজুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে সিএমপির ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে।
একই আদেশে সিএমপি কমিশনার খুলশি থানার ওসি হিসাবে চান্দগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামানকে পদায়ন করা হয়েছে। অপরদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়াকে চান্দগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ঢাকার সিআইডিতে বদলি করা হয় নগরের খুলশি থানার ওসি প্রণব চৌধুরীকে।
বদলির তালিকায় বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন, কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশসহ বিভিন্ন পদের অন্তত ৪০ জন পুলিশ অফিসার রয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত বুধবার সদর দপ্তরের এক আদেশে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহেদুল ইসলামকে মহেশখালীতে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের বদলির তালিকায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশে কর্মরত উপকমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার এবং সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহে তাদের বদলির আদেশ সিএমপিতে পৌছাঁবে বলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, দক্ষ ও যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় পদায়ন বা বদলি করা হচ্ছে। পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বদলি করা হচ্ছে। বদলি পুলিশের একটি রুটিন ওয়ার্ক।’
প্রসঙ্গত, গত ১০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নগরের বিভিন্ন থানায় মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ওসি পদায়নের বিষয়ে পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীর বলেছিলেন, ‘এসব কাজ তো কেউ প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা দিয়ে করে না। সুতরাং আমি বলব, আপানারা আমাকে পর্যবেক্ষণ করুন। আমার কাজ দেখুন। তারপর আপনাদের মতামত দেবেন। আমার চাকরির বয়স ২৩ বছর। অনুরোধ করব, আপনারা আমার আগের যেসব কর্মস্থল আছে, সেখানে আপনাদের (সাংবাদিকদের) যেসব সহকর্মী আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার সম্পর্কে জানুন। তারপর আমাকে মূল্যায়ন করুন।’