টানেলে বেপরোয়া গতি

৩ মাসে ছয় দুর্ঘটনা আহত ১৪, নিহত ২

জাহিদ হাসান হৃদয় »
বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। এদেশের মানুষ সেতু, কালভার্ট, ফ্লাইওভারের সাথে পরিচিত হলেও টানেলের সাথে যোগাযোগটা একেবারেই নতুন। তাই টানেলে গাড়ি চলাচলের সব ধরনের নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন টানেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টানেল কর্তৃপক্ষের এসব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টানেলের ভেতর চালানো হচ্ছে যানবাহন। বেপরোয়া গতির কারণে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। টানেল সড়কের এই বেপরোয়া গতি থামাবে কে- এমন প্রশ্ন সবার মুখে। এদিকে টানেলের যানচলাচলের গতি পরিমাপ করতে টানেলের ভেতরে-বাইরে স্প্রিড ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল-ট্রাফিক) তানভীর রিফাত।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হয়। তার আগে টানেলে যানচলাচলের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। টানেলে দুর্ঘটনা এড়াতে নিষিদ্ধ করা হয় মোটর সাইকেলসহ দুই-তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন। নির্দেশনা অনুযায়ী টানেলে দুই-তিন চাকার যানবাহন চলাচল না করলেও চার চাকা কিংবা চার চাকার চেয়ে বেশি চাকার যানবাহনগুলোর বেপরোয়া গতির কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে মাইক্রো, হাইস, কারের মতো গাড়িগুলোর গতি থাকে বেপরোয়া। ইতিমধ্যে টানেলের ভেতর দিয়ে বেপরোয়া গতির কার প্রতিযোগিতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
টানেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন হওয়ার পর ৩০ অক্টোবর টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় একিট প্রাডো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। পরবর্তী মাসের ৩ নভেম্বর টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে একটি বেপরোয়া গতির বাস এসে ধাক্কা দেয়। এই ঘটনায় প্রাইভেট কারটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং কারে থাকা চারজন আহত হয়। ১০ নভেম্বর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ওয়াই জংশন সংলগ্ন এলাকায় বাসের ধাক্কায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবুল হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে বৈরাগ মুহাম্মাদপুর এলাকায় দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিকিউরিটি পোস্টে ধাক্কা দেয়। এসময় সিকিউরিটি পোস্ট ভেঙে দায়িত্বরত একজন নৌবাহিনীর সদস্যসহ সাতজন আহত হয়। এর একদিন পর ১৮ জানুয়ারি টানেলের ভেতর একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টানেলেন ভেতরের টিউবে ধাক্কা দেয়। এই ঘটনায় টানেলের ডেকোরেশন বোর্ডের কিছু অংশ ভেঙে যায় এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ভোরে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে মুহাম্মদপুর এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে আনোয়ার পারভেজ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয় মোহাম্মদ বসর ও আজিম নামের আরও দু’জন। এই নিয়ে টানেল উদ্বোধনের ৩ মাসে ৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৪ জন এবং নিহত হয়েছেন দুজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানেলের ভেতরে পরিবহন শৃঙ্খলার দেখভাল করছেন টানেল কর্তৃপক্ষ। তাই টানেলের বিষয়ে কার্যকর কোনও ভূমিকা রাখতে পারছেন না সিএমপি ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশের গাড়ি টানেলের ভেতর প্রবেশ করলেই দিতে হচ্ছে টোল। আর সে কারণেই টানেলে গিয়ে পরিবহনের শৃঙ্খলা দেখভালের আগ্রহ কম পুলিশের।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর থেকে টানেলের নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স এটির নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে পুলিশ টানেলের দুই পাশে পরিবহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে।
এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের অসতর্কতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল-ট্রাফিক) তানভীর রিফাত জানান, মূলত নিয়ম মেনে গাড়ি না চালানোর কারণে টানেলে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকরা সচেতন এবং সতর্ক হলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া নির্ধারিত গতিতে যানবাহন চলাচলের গতি নির্ণয় করার জন্য টানেলের ভেতরে-বাইরে স্প্রিড ক্যামেরা স্থাপন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে।
পুলিশের কাছ থেকে টানেলে টোল নেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, টোল সবার জন্য প্রযোজ্য। সেতু কর্তৃপক্ষের নিয়ম হচ্ছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির গাড়ি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির বহর গেলেও টোল দিতে হবে।