কেজিডিসিএল : সব গ্রাহক আসবে প্রিপেইড মিটারের আওতায়

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
গ্যাসের অপচয়রোধ ও গ্রাহকদের অর্থ সাশ্রয়ের কথা ভেবে নিজস্ব অর্থায়নে দ্বিতীয় দফায় প্রিপেইড মিটার প্রকল্প হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। প্রথমে ৬০ হাজার মিটার বসানোর দুই বছর পর দ্বিতীয় প্রকল্পে এক লাখ মিটার সংস্থাপনের প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পের প্রায় তিন বছর শেষ হওয়ার পরও এখনও কাক্সিক্ষত মিটারের আবেদন জমা পড়েনি। আবেদন যা জমা হয়েছে, তার ৮৭ শতাংশ গ্রাহক এখনও লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করেননি। এককালীন বাড়তি খরচ ও সচেতনতার অভাবে আগ্রহ কম দেখা গেলেও সংস্থাটির সকল গ্রাহকের জন্য প্রিপেইড মিটারের নতুন প্রকল্প আসছে বলে মন্তব্য করছেন ভোক্তা ও কেজিডিসিএল সংশ্লিষ্টরা।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৮ হাজার। এরমধ্যে জাইকার অর্থায়নে ২০১৫ সালে হাতে নেওয়া ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অধীনে ৬০ হাজার সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। এর দুই বছর পর ‘আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প’ শিরোনামে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে আরেকটি প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি এক লাখ আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইনে প্রিপেইড মিটারের জন্য গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এখনো আবেদন জমা পড়েছে আনুমানিক ৯৬ হাজার মিটারের। এরমধ্যে আবেদন করা প্রায় সবার নকশা অনুমোদন করা হলেও মিটার সংস্থাপনের জন্য লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছে প্রায় ১৩ হাজার মিটারের গ্রাহক।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম বলেন, ‘গ্রাহকরা আবেদন করার পাশাপাশি আমাদের ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে কিছুটা দেরি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৯৬ হাজার মিটারের জন্য আবেদন পেয়েছি। এরমধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দুইবার আবেদন করা বা কাগজপত্র ঠিকঠাক না দেওয়ায় সংশোধন করা হয়েছে। বলা যায়, প্রায় সবগুলো আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। এখনও গ্রাহকদের আবেদনের সুযোগ রয়েছে। আমরা নকশা অনুমোদনসহ গ্রাহকদের আবেদন গ্রহণ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন, আমরা এক লাখ মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছি। ২৪ ডিসেম্বর প্রথম চালানে ৬ হাজার ৩৩৬টি মিটার আনা হয়েছে। প্রতিবারই এক কনটেইনার করে এরকম মিটার আনা হবে। এরমধ্যে বিশেষ করে হালিশহর এলাকায় আনুমানিক ১১’শ মিটার বসানো হয়েছে। এছাড়া বন্দর ও ডবলমুরিংয়ে শ’খানেক মিটার বসানো করা হয়েছে। দ্বিতীয় চালান আসবে ১০ ফেব্রুয়ারি ও তৃতীয় চালান আসবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। গ্রাহকরা যদি তাদের সংযোগে লাইনের কাজ শেষ করে রাখতো, তাহলে আমরা আরও দ্রুত কাজ শেষ করতে পারতাম।’
তিন বছরে কাক্সিক্ষত গ্রাহক না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা অধিকাংশ সময় কাজের শেষ মুহূর্তে এসে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর এ প্রকল্পটি গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে, রাষ্ট্রের জন্যও ভালো হবে। কারণ অপচয় কমবে। গ্রাহকরা যতটুকু জ্বালাবে, ততটুকু বিল দেবে। আমাদের দিনে ৪০০ মিটার বসানোর সক্ষমতা থাকলেও আমরা বসাচ্ছি সর্বোচ্চ ১৫০ করে। ৯৬ হাজার গ্রাহকের আবেদন পেলেও গ্যাস লাইনের কাজ করেছে ১২ থেকে ১৩ হাজার মিটারের গ্রাহক। যারা প্রিপেইড মিটার বসাচ্ছে, তাদের প্রতিমাসে গড়ে ২০০ টাকার বেশি সাশ্রয় হবে। সাশ্রয় হচ্ছে দেখার পরে হয়তো দেখা যাবে যারা আবেদন করেছে তারা লাইনের মেনটেইন্যান্স করে ফেলবে। আর যারা আবেদন করেনি তারাও আবেদন করবে।’
প্রিপেইড মিটারের দুইটি প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৯৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে কেবল ১ লাখ ৬০ হাজার আওতাভুক্ত হচ্ছে। যদি সব গ্রাহক আগ্রহী হয়, তখন সংস্থাটি গ্রাহকদের কিভাবে সামাল দিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প চলা অবস্থায় পুনরায় আরেকটি প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার প্ল্যানিং ডিভিশন (পরিকল্পনা বিভাগ) ভালো বলতে পারবেন।’
কেজিডিসিএলের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুণ্ড বলেন, ‘আমরা এখন কেজিডিসিএলের সকল গ্রাহককে প্রিপেইডের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিচ্ছি। দ্বিতীয় দফায় আমাদের যে প্রকল্পটি চলমান আছে সেটির মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। আমরা এরমধ্যে আরেকটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করছি। সেটিতে কেজিডিসিএলের সকল গ্রাহককে আওতায় আনার ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে। এবার আর কোনো অংশ বিশেষ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। বাকী সব গ্রাহকদের একসাথে প্রিপেইড মিটার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই সবাইকে প্রিপেইড মিটারে আগ্রহী করতে জনসচেতনতামূলক কিছু কাজ করা হবে।’
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলে রাষ্ট্রের গ্যাস অপচয় বন্ধ হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের গ্যাস বাবদ ব্যয় কমে যাবে। তাই এ প্রকল্পটি প্রশংসনীয়। কিন্তু কেজিডিসিএলের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার বসাতে আগ্রহ কম থাকার অন্যতম কারণ হলো- তারা গ্রাহকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে খুবই কম প্রচার-প্রচারণা করায় মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- লাইনে কাজ করতে বাড়তি একটা খরচ হচ্ছে। সবাই এ মুহূর্তে এককালীন খরচটা করতে আগ্রহী হচ্ছে না। আমার মনে হয়, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও লাইনের কাজে ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কেজিডিসিএল যদি কোনো উদ্যোগ নেয়, তাহলে গ্রাহকরা আগ্রহী হবে।’