জ্বালানি-গ্যাস সংকটে ব্যাহত বিদ্যুৎ উৎপাদন

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »

জৈষ্ঠ্যের তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। এ অবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও কমেছে উৎপাদনের মাত্রা। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৭টি প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে ১৬টি। সচল থাকা প্ল্যান্টগুলোও উৎপাদন করছে সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম। এর কারণ হিসেবে কেবল জ্বালানি সংকটের কথাই ওঠে এসেছে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) উৎপাদনভিত্তিক তথ্য থেকে দেখা যায়, ২৭টি প্ল্যান্টের মধ্যে ২৫টি প্ল্যান্টের সক্ষমতা রয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ দশমিক ১ মেগাওয়াট। বাকি দুইটি প্ল্যান্টের উৎপাদনও নেই, সক্ষমতার কথাও উল্লেখ নেই। প্ল্যান্ট দুইটি হলো কেইপিজেড ও কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎ। চালু থাকা ২৫টি প্ল্যান্টের মধ্যে চালু আছে ১৬টি। চালু থাকা প্ল্যান্টগুলোর সক্ষমতা ১ হাজার ৯৭৯ দশমিক ৭ মেগাওয়াট। আর প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদন ১ হাজার ৩০৭ মেগাওয়াট। অথচ চট্টগ্রামের বৈদ্যুতিক চাহিদা গতকালের হিসেবে ১ হাজার ৬৪৯ মেগাওয়াট। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে ৩৪২ মেগাওয়াট।

সংস্থাটির তথ্যানুসারে দেখা যায়, রাউজানে ২১০ মেগাওয়াটের দুইটি প্ল্যান্ট থেকে ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে একটি প্ল্যান্ট বন্ধ এবং অন্য প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেগাওয়াট। শিকলবাহায় ৫৫ মেগাওয়াটের জুদিয়াক প্ল্যান্ট থেকে ১৭ মেগাওয়াট ও ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি থেকে উৎপাদন এসেছে ২২১ মেগাওয়াট। তবে ১৫০ মেগাওয়াটের প্ল্যান্টে কোনো উৎপাদন নেই। এছাড়া কাপ্তাইয়ের ৪৬ মেগাওয়াটের একটি প্ল্যান্ট থেকে ২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও ৪৬ মেগাওয়াটের অন্যটি এবং ৫০ মেগাওয়াটের তিনটি প্ল্যান্টের কোনো উৎপাদন নেই। আর ১০০ মেগাওয়াটের দোহাজারি থেকে ৫১, ১০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারী থেকে ৬১, ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট থেকে ৯ মেগাওয়াট, ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটড থেকে ২৩, ৩০০ মেগাওয়াটের জুলধা থেকে ২৩২, ২৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াটের আরপিসিএল থেকে ১৭, ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা থেকে ৪৪, ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা-বারাকা থেকে ৬৯, ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী থেকে ৭৪, ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড থেকে ২৭৪, ১১৬ মেগাওয়াটের এনলিমা থেকে ৩৪ এবং ১৬২ মেগাওয়াটের মিরসরাই বি-আর প্ল্যান্ট থেকে ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

এ নিয়ে কথা বললে বিপিডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ প্ল্যান্টগুলো গ্যাস ও তেল নির্ভর। এর বাইরে জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ প্ল্যান্টের উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে না। তবে কিছু প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকার কারণেও কোনো উৎপাদন আসছে না। কোন কোন প্ল্যান্ট কি সংকটে আছে তা পৃথকভাবে কথা বলা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। এছাড়া নিজস্ব প্ল্যান্টের উৎপাদন নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা জানান বিভিন্ন প্ল্যান্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

তবে উৎপাদন নিয়ে জানতে কথা হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা অফিসের জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শামীম হাসানের সঙ্গে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের কিছু প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে। তবে চট্টগ্রামের যে চাহিদা তা ঠিকভাবে সরবরাহের জন্য চালু থাকা প্ল্যান্টগুলো হলেই হয়। এ জায়গাটায় আমরা সমস্যায় পড়েছি জ্বালানি সংকটের কারণে। এরমধ্যে গ্যাসের চাপ খুবই কম থাকায় সংকটটা আরও বেড়েছে। যেখানে আমাদের ১৩’শ থেকে ১৪’শ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন কিউবিক ফিট অব গ্যাস পার ডে) প্রয়োজন, সেখানে আমরা পাচ্ছি ৮’শ থেকে ৯’শ এমএমসিএফডি। গ্যাসের চাপটা যদি ঠিকভাবে পাওয়া যেত, তাহলে প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদনে চট্টগ্রামের বিতরণ ভালোভাবে দিয়ে ন্যাশনাল গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ করা যেত।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিপণন শাখার দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, ‘এখন বিদ্যুতের জন্য আমরা ভালো পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করছি। ঢাকার দিকে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রামে গ্যাসের কোনো সংকট নেই। আমরা এলএনজি ভালো পাচ্ছি। ফলে আমাদের সরবরাহও ভালো রেখেছি। বিদ্যুতের জন্য আমরা এখন ১১’শ এমএমসিএফডি গ্যাস দিচ্ছি।’

এদিকে ৩৪২ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও চট্টগ্রামের নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকার খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জনদুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে বিপিডিবির চট্টগ্রাম বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অনেকে চিন্তিত। কিন্তু এটি নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টগুলো থেকে উৎপাদন যা আসছে তা চট্টগ্রামবাসীকে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা এ সময় ডলার ক্রাইসিসের কথা যেভাবে চিন্তা করছি, একইভাবে অসহনীয় গরমে জনজীবনের দুর্ভোগের কথাও ভাবছি। তাই আবাসিক কিংবা শিল্পখাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো নীতি নেই। আমরা সবদিকে ব্যালেন্স করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। আর ঘাটতি যা আছে তা সব জায়গাতেই সমানভাবে বিতরণের চেষ্টা করছি।’