চট্টগ্রাম সেন্টমার্টিন রুটে ক্রুজ শিপ বে-ওয়ান

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের উদ্যোগ
চালু হচ্ছে বৃহস্পতিবার
যাতায়াত করবে সপ্তাহে তিন দিন
ইকোনমি ও বিজনেস সিটে জনপ্রতি আসা-যাওয়া ভাড়া যথাক্রমে ৩ হাজার ও ৪ হাজার টাকা
১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কেবিন রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
এখন আমাদেরও আছে ক্রুজ শিপ। বিশ্বের ৩১৪টি ক্রুজ শিপের একটি এখন আমাদের দেশে। আর এই শিপের মাধ্যমে ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরা পর্যটন শিল্পের বিকাশে সমুদ্র পথ যেমন ব্যবহার করতে পারবো তেমনিভাবে যাতায়াত ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসবে। আমাদেরকে এই শিপের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। ‘বে ওয়ান’ নামের এই ক্রুজ জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করবে। আগামীতে আরো আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীন রুটে চলাচল করতে পারে এই জাহাজ। ১৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করবে এই প্রমোদতরী।
১২১ মিটার দীর্ঘ ও ৫ দশমিক ৩ মিটার ড্রাফটের এই জাহাজটিতে রয়েছে দুই হাজার জনের ধারণক্ষমতা। জাপান থেকে ১০৫ কোটি টাকায় কিনে আনা ২৮ বছর বয়সী এই জাহাজটি বিশ্বের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ৩১৪টি ক্রুজ শিপের একটি। ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে চলা জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে পরদিন সকাল ৭টায় সেন্টমার্টিনে পৌঁছাবে। আবার সেন্টমার্টিন থেকে দুপুর দেড়টায় ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টায়।
কতো সিট রয়েছে এই জাহাজে?
জাহাজটিতে ইকোনমি ও বিজনেস ক্লাশের সিট রয়েছে ১৫শটি। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট স্যুট, বাঙ্কার বেড কেবিন, টু ইন বেড কেবিন রয়েছে ১৫টি। এছাড়া জাহাজ পরিচালনায় ১৭ জন ক্রু ছাড়াও যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকবে আরো ১৫০ জন ক্রু। চার তলার এই জাহাজটিতে রয়েছে একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ, সুদৃশ্য লবি এবং ছাদের উপরে রয়েছে বিশাল ইভেন্ট জোন।
ভাড়া কত?
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার সমুদ্র পথ পরিবহনে ইকোনমি সিট তিন হাজার টাকা, বিজনেস সিট চার হাজার টাকা, প্রতিজনের বাঙ্কার বেড দশ হাজার টাকা, দুই জনের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুাট ৩০ হাজার টাকা, দুই জনের রয়েল স্যুট ৪৫ হাজার টাকা, চারজনের ফ্যামিলি প্যাকেজ (বাঙ্কার বেড) ৫০ হাজার টাকা, ভিভিআইপি কেবিন দুই জনের জন্য ৫০ হাজার টাকা। বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাশে শুধু স্ন্যাকস রয়েছে এছাড়া বাকি সব প্যাকেজের সাথে ডিনার ও ব্রেকফাস্ট রয়েছে। সকল ভাড়া আসা ও যাওয়া বাবদ।
সপ্তাহের তিন দিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর সংলগ্ন পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে জাহাজটি ছেড়ে যাবে। পরদিন সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবে জাহাজটি।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজ সেন্টমার্টিন রুটে চালু করেছিলাম। কিন্তু সেখানে জেটি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাই এবার চট্টগ্রাম থেকে ক্রুজ শিপ চালু করছি। জাপান থেকে আন্তর্জাতিকজ রুটে চলাচলকারী এই জাহাজটি সমুদ্রপথের। এটি উপকূলে ভিড়তে পারে না। এখানে ওয়েস্টার্ন মেরিন ওয়াটার বাস টার্মিনাল করায় জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ পেলাম। তাই এখান থেকেই জাহাজটি ছেড়ে যাবে।
সেন্টমার্টিনে কিভাবে ভিড়বে এই জাহাজ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জাহাজটি সেন্টমার্টিনে ভিড়তে পারবে না। সেন্টমার্টিনের পাঁচ কিলোমিটার আগে আরেকটি ছোটো জাহাজে করে যাত্রীদের সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে।
এটা কতটুকু ব্যবসা সফল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জাহাজের পেছনে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ রয়েছে। তাই যদি কমপক্ষে ৫০০ জন যাত্রী না হয় তাহলে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
কিন্তু বছরের সব সময় তো এই জাহাজ সেন্টমার্টিনে যেতে পারবে না। তাহলে তা কতটুকু ব্যবসা সফল হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ বলেন, এজন্য সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক রুটে এই জাহাজ চালানোর জন্য সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমোদন পেলে চট্টগ্রাম থেকে আন্দামান, থাইল্যান্ডের ফুকেট কিংবা ইন্দোনেশিয়া এবং কলকাতায় যাতায়াত করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, হজ্ব যাত্রীদেরও এই জাহাজে করে সাত দিনে সৌদিআরবে পৌঁছে দিতে পারবো। এতে হজ্বযাত্রীরা এবাদত করতে করতে বিমান বন্দরের ঝামেলা এড়িয়ে হজ্ব করতে যেতে পারবে।