চট্টগ্রাম পিবিআই’র ৫ বছরের পথচলা

নিজস্ব প্রতিবেদক >>
চাঞ্চল্যকর মামলায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৫ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কাজ শুরু করে চট্টগ্রামে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৫ বছর পূর্ণ করে ৭ হাজারের অধিক তদন্তে কাজ করেছে মহানগর পিবিআই। আজ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের ৬ বছরে পদার্পণ করেছে এ সংস্থাটি।
জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (এফবিআই) আদলে ২০১২ সালে পিবিআই ইউনিট গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি পিবিআইয়ের জন্য একটি নিজস্ব বিধিমালাও অনুমোদন করা হয়েছে। এ বিধিমালায় পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১-এর সেকশন ১২ অনুযায়ী কিছু বিশেষ ধরনের মামলা তদন্ত করার অনুমোদন রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধ সংগঠিত স্থানে অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তের ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে এ সংস্থাটিকে। পিবিআই মূলত ডাকাতি, খুন, দস্যুতা, চোরাচালান ও কালোবাজারি, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা, অগ্নি সংযোগ, সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, অস্ত্র মামলা, মানবপাচার, মাদকদ্রব্য, অপহরণ ও মুক্তিপণ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করে থাকে।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ জুন ফটিকছড়ি সমিতি হাটের একটি মামলার তদন্তে দায়িত্ব পাওয়ার মধ্যদিয়ে সংস্থাটি চট্টগ্রামে কার্যক্রম শুরু করে। ২১ জন সদস্য দিয়ে শুরু করে বর্তমানে তারা ৮০ জনের সংস্থা। ঠিক একবছর পরে ২০১৬ সালে ভাগ করা হয় মহানগর ও জেলা পর্যায়ের কার্যক্রম।
পিবিআই কর্মকর্তা পরিদর্শক (প্রশাসন) ওমর ফারুক বলেন, মহানগর পর্যায়ে পিবিআইয়ে ৪১ জন সদস্য রয়েছে। ১ জন পুলিশ সুপার ও ১৮ জন পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শক রয়েছে। এসময় তিনি বলেন, পিবিআই এ পর্যন্ত ৭ হাজারের অধিক মামলা তদন্ত করেছে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের মত মামলা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাকি সব মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
নগরীতে যেসব মামলা বেশি হয়
নারী নির্যাতন মামলা তদন্তের হার সবচেয়ে বেশি। নগরের শিল্প এলাকা পতেঙ্গা, ইপিজেড ও বায়েজিদ থেকে নারী নির্যাতন বিষয়ে মামলা বেশি হয়। এসব এলাকাকে মামলার হটস্পট বলা যায়। এসব এলাকায় ঘন বসতির কারণে এমন হয়ে থাকে বলে ধারণা পিবিআই সদস্যর। অন্যদিকে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হতাহত, খুন এসব বিষয়ও উপেক্ষা করার নয়। তাছাড়া রয়েছে অর্থ ও ব্যবসায়ীক লেনদেনের কারণে ঘটে যাওয়া ঘটনা। এসবের বাইরেও রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে মারারির ঘটনা। অস্ত্র মহড়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা। তবে সাগর পাড় এলাকায় খুনের ঘটনা বেশি ঘটে।
উল্লেখযোগ্য চাঞ্চল্যকর মামলা
২০১৭ সালের ১৫ জুলাই ভারতীয় শিক্ষার্থী আতিফ শেখ হত্যা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন। একই বছরে ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এ মামলায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। আবার একই বছরে ২৫ নভেম্বর দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতে খুন হওয়া আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী হত্যা মামলার তদন্ত। ১২ ডিসেম্বরে একই পরিবারের ৪ নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ মামলায় পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হয়। এদিকে ২০১৬ সালের ৫ জুন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মমিলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। চলতি বছরে ৭ এপ্রিল ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরীর রহস্যজনক আত্মহত্যার তদন্ত চলমান রয়েছে।
নগর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে পিবিআই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমদিকে এ সংস্থাকে কেউ চিনতো না। বর্তমানে পিবিআই সবার ভরসার সংস্থায় পরিণত হয়েছে। তবে কম সময়ে এতটা সাড়া পাওয়া যাবে তা ভাবিনি। ৫ বছরে একটা ইউনিটকে দাঁড় করানো অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। বর্তমানে পিবিআই এমন এক অবস্থানে আছে যেখানে আমি না থাকলেও এ সংস্থাটি পুরোদমে চলতে পারবে।’