চকরিয়ায় আমনের রেকর্ড ফলন

চকরিয়ায় বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে-সুপ্রভাত

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে জানায় কৃষকরা

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় চলতি মৌসুমে ৪৭ হাজার ৭শ৯৪ একর জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতীতের সময়ের চেয়ে চলতি মৌসুমে ধানের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। এতে এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে কৃষকরা অন্তত ১শ৬৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এবছর আমন চাষে আশাতীত সাফল্য পেতে যাচ্ছে কৃষকরা। আমন চাষে অভাবনীয় এই সাফল্যে উপজেলায় আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকবেনা বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমানে উপজেলার দিগন্তজুড়ে সোনালি ধান কর্তনে পুরোদমে সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। ইতোমধ্যে ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য মাঠ তৈরির কাজও শুরু করেছেন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকেরা মাঠের সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এদিকে আমনে বাম্পার ফলন হওয়ায় উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। আর নবান্নের এইদিনে শীতের আগমনে এখন খুশিতে কৃষকের ঘরে চলছে পিঠা-পুলির আমেজ। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব বড়ুয়া বলেন, চলতি মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার ১৮ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ৪৭ হাজার ৭৯৪ একর (১৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর) জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তৎমধ্যে ৪১ হাজার একর জমিতে উফশী জাত এবং প্রায় সাত হাজার একর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করেন কৃষকরা। উফশী জাতে রয়েছে বি-ধান উনপঞ্চাশ, বায়ান্ন, পচাঁত্তর, তেতত্রিশ, ভারতীয় পাইজাম হরিবল এবং ও স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে বেশির ভাগ বিন্নি ধান। তিনি বলেন, জুন-জুলাই মাসের দিকে কৃষকরা আমন চাষাবাদ শুরু করেন। পরবর্তী চারমাস পর চলতি নভেম্বর থেকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় পাকা ধান কাটা। ইতোমধ্যে উপজেলার ৮০ ভাগ জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষকরা। আশা করছি ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমন কর্তন শেষ হবে। চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিন বলেন, আমনের বীজতলা তৈরি এবং জমিতে চারা রোপন পরবর্তী সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের মনিটরিং ও সঠিক নির্দেশনায় কৃষকরা জমিতে পরিমাণ মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে নিবিড় পরিচর্যা করেছেন। ক্ষেতে পোকামাকড় দমনে পাচিং পদ্ধতি, আলোকফাঁদসহ বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে, সেই কারণে এবছর আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর করোনা সংক্রমন থাকলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অনুকুলে। বড়ধরণের দুর্যোগ বা বৈরী পরিস্থিতি না থাকার কারনে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনে বেশ উৎফুল্ল চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম নাছিম হোসেন। তিনি বলেন, চাষের শুরু থেকে কর্তনের আগমুর্হুত পর্যন্ত মাঠে কর্মরত উপ-সহকারি কর্মকর্তারা কৃষককে বিভিন্নভাবে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। জমিতে কোন ধরনের রোগ-বালাইয়ের উপস্থিতি দেখলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। মুলত সবার দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে এবছর আমন চাষে সাফল্য অর্জন হয়েছে। তিনি বলেন, এবছর প্রতিহেক্টর জমিতে পাঁচ মেট্টিক টন খাদ্য সষ্য (ধান) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর (৪৭ হাজার ৭৯৪ একর) জমিতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হতে পারে এমনটাই ধারণা করছি। বর্তমানে প্রতিটন ধান সরকারি মুল্যে ২৬ হাজার টাকা মুল্যে বিক্রি হচ্ছে, সেই হিসেবে উৎপাদিত খাদ্য সষ্যের মুল্য দাঁড়াবে ১শ৬৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার কাছাকাছি।