কক্সবাজার যাবে ট্রেন, উদ্বোধন ১১ নভেম্বর

সুপ্রভাত ডেস্ক »

আর ৮ দিন বাদেই কক্সবাজারের পথে ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১১ নভেম্বর এ পথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন উদ্বোধন করবেন।’

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ায় রেলপথেই এখন ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যাবে। খবর বিডিনিউজের।

প্রকল্পটি পরিদর্শনে এসে গত ১৬ অক্টোবর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, ১২ নভেম্বর এই রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসাবে কক্সবাজারের পথে রেল চলাচল একদিন এগিয়ে এল।

বৃহস্পতিবার প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘৭ তারিখে মাননীয় রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ট্রায়াল হবে, চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। তিনি জানাবেন, বাণিজ্যিকভাবে কখন এই রুটে ট্রেন চালু হবে। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন ট্রেনের প্রস্তাবিত নাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। উনি নির্ধারণ করবেন।’

‘১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসবেন। ওখানে সুধী সমাবেশ হবে। আইকনিক স্টেশন দেখবেন এবং ট্রেনেও একটা অংশ থাকবে উদ্বোধনের।’

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে সুবক্তগীন বলেন, ‘এখন একটু সময় বেশি লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার আমরা এখন পূর্ণগতিতে চালাব না। ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিতে চালাব। মাস দুয়েক পরে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালাব। এখন হয়ত আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে পরে সেটা ২ ঘণ্টায় করতে চাই।’

বর্তমানে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই হিসাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে ৭ ঘণ্টার সমতো সময় প্রয়োজন হবে।

প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, ‘এ প্রকল্পের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথমত এটা একটা নতুন জেলাকে যুক্ত করল- কক্সবাজার জেলা। দ্বিতীয়ত এটা পর্যটন নগরীকে যুক্ত করল। এবং এটা পরবর্তীতে আমাদের মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্র বন্দর সেটার সাথেও আমাদের কানেক্ট করছে। ভবিষ্যতে ওখানে রেল কানেক্টিভিটি হবে।’

চালু হতে যাওয়া রেলপথে যে চুনতি অভয়ারণ্য পড়েছে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বনাঞ্চলের ভিতর দিয়ে এই রেললাইন গেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, যথাসম্ভব পরিবেশকে রক্ষা করতে। এবং এখানে যে বন্য প্রাণী আছে, তারা যাতে অবাধে বিচরণ করতে পারে বনের একপাশ থেকে আরেক পাশে; সেজন্য এখানে হাতির জন্য আন্ডারপাস এবং ওভারপাস করা হয়েছে।’

‘হাতি যে ধরনের খাদ্য খায়, তার পথে সে ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে; যাতে হাতি সেই পথ দিয়ে চলাচল করে। এটা দীর্ঘদিন আমরা সিসিটিভিতে মনিটরিং করে এবং ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টরা ডিজাইন করেছে, সেভাবে এটা হয়েছে। আমাদের জানা মতে, এশিয়াতে আর হাতির জন্য কোনো ওভারপাস বা আন্ডারপাস নেই। এটাই প্রথম।’

সুবক্তগীন বলেন, ‘এরপর কক্সবাজার যে রেলওয়ে স্টেশনটা, এটা আধুনিক একটা ভবন। স্টেশনের অপারেশন সুবিধা ব্যাপক হারে আছে। লিফট ও এসকেলেটর আছে বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থদের জন্য। ফুড কোর্ট, আবাসিক, যাত্রীদের জন্য লকার ব্যবস্থা সব কিছু রাখা হয়েছে।’

‘একজন পর্যটক আলাদা করে হোটেলে না থাকলেও পারবেন। সেখানে লাগেজ রাখতে পারবেন। স্বল্প খরচে কেউ থাকতে চাইলে সেখানে থাকতেও পারবেন। ভালো মানের অপারেটর দিয়ে সেটি পরিচালনা করা হবে।’

কালুরঘাট সেতুর মেরামত কাজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে সুবক্তগীন বলেন, ‘কালকে (শুক্রবার) সেখানে ট্রায়াল হবে।’

এ রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনো রেল যোগাযোগই ছিল না। শুরুতে এটি ছিল ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল।
পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা এবং বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।
বর্তমান সরকার ২০১০ সালে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ করার কথা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।

পরে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের জন্য এডিবিকে প্রস্তাব দেয় সরকার।

এডিবি বিশদ সমীক্ষা পরিচালনা করে ট্রান্স এশিয়ান রেল লাইনের আওতায় প্রকল্পটিতে অর্থায়নে সম্মতি দেয়। এরপর ২০১৭ সালে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পটির ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

পরে কোভিড সময়ে কাজের অগ্রগতি প্রত্যাশিত না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ঠিক করা হয়।