আব্বা হুজুরের দেশ হতে

আবদুল মান্নান :

পাঠক মনে করবেন না আমি আমার আব্বা হুজুরের দেশের কথা বলছি। আমি বলছি হেফাজত, জামাতসহ আরো অন্যান্য যে সব তথাকথিত রাজনৈতিক দল ইসলাম বেচে খায়, জোব্বা, টুপি আর দাড়ি রেখে সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করে অথবা জাতির পিতার মুর‌্যাল ভেঙে ফেলে কিংবা সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর চড়াও হয় এবং তারা কিছুতেই বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে না তাদের কথা বলছি। তারা পাকিস্তান আর আফগানিস্তানকে নিজেদের আব্বা হুজুরের দেশ মনে করে । আমার প্রয়াত আব্বা হুজুরের দেশ এই বাংলাদেশ । সেদিন একটি টিভি অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হেফাজত নামের সন্ত্রাসীর সংগঠনকে ইসলামি দল বলে আলোচনা শুরু করলে আমি থামিয়ে দিয়ে তাদের বলি হেফাজত কোন ইসলামি দল নয়, তারা একদল সন্ত্রাসী, ইসলাম বেচে খায় আর নানা অজুহাতে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে। বলি আমি, নিজে দাবি করতে পারি আমি এই সব ধর্মের ফেরিওয়ালাদের চেয়ে কোন অংশে কম মুসলমান নই । কিন্তু এদের মতো ওয়াজের নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করি না, ধর্ম বেচে খাই না । যাক এই সব প্রসঙ্গে অন্য আরেক সময় বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রইলো ।
বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও জাতির পিতার জন্মের শত বছর পালন শেষ করলো । এই দুটি অনুষ্ঠান করার জন্য অনেক পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিন্তু করোনার কারণে তার অনেকগুলো কাটছাঁট করতে হয়েছে । শুধু শেষ দশদিন, ১৭ হতে ২৭ মার্চ সময়ের মধ্যে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে যাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বাদে বাকি সার্ক দেশগুলোর সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা স্বশরীরে অংশ নিয়েছেন । সীমিত সংখ্যক দর্শক শ্রোতাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত ছিলেন । এছাড়া বিশ্বের প্রায় পঞ্চাশটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা শুধু শুভেচ্ছা বাণীই দেননি তাঁরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । একই ভাবে প্রশংসা করেছেন ব্রিটেনের রানি, রোমান ক্যাথলিক পোপ ফ্রান্সিস, জাতিসংঘের মহাসচিব সহ অনেকেই । তবে এই সময় সব চেয়ে অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল পাকিস্তানের করাচি হতে প্রকাশিত সাউথ এশিয়া ম্যাগাজিনটি বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে একটি কভার স্টোরি করা। কভারে শেখ হাসিনার একট পূর্ণ পৃষ্ঠাব্যাপি ছবি দিয়ে হেড লাইন করেছে “ঋরভঃু ণবধৎং ড়ভ ইধহমষধফবংয-ঞযব জরংরহম ঝঁহ!” (বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর-উদীয়মান সূর্য !) । বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানি মিডিয়াতে প্রশংসা নূতন কিছু নয় । ইতোপূর্বে তাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘যে পূর্ব পাকিস্তানকে সব সময় আমরা তাচ্ছিল্য করেছি, যারা আমাদের তাচ্ছিল্লের শিকার হয়ে আমাদের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন বংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল তারা কি ভাবে সর্বক্ষেত্রে আমাদের পিছনে ফেলে গেল?’ পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দায়িত্ব নিয়ে তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভায় পাকিস্তানের উন্নয়নের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কেমন হবে তা বলতে গিয়ে বলেছিলেন তিনি পাকিস্তানকে সুইডেনের মডেলে উন্নত করবেন । সেই রাতে পাকিস্তানের একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেল টকশোতে অংশগ্রহণকারিরা পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন ‘পাকিস্তানকে সুইডেন বানানোর আগে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও’। এই বক্তব্য পাকিস্তানের জনগণ বেশ প্রশংসা করেছিল এবং এও বলেছিল বাংলাদেশের এই চোখধাঁধানো উন্নয়নের পিছনে সব চেয়ে বেশি অবদান হচ্ছে সেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যার সামনে রয়েছেন দেশটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা (কোন কোন টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাসিনা শেখ বলেও সম্বোধন করা হয়)।
সাউথইস্ট ম্যাগাজিনে সাতটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে যেমন আছে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঠিক তেমনি আছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প-িত জনেরা। মূল প্রবন্ধটি লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক সিনেটর জাভেদ জব্বার। তিনি এক সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন । তাঁর লেখার শিরোনামটি ছিল খরভব ইবমরহং ধঃ ৫০! (পঞ্চাশে জীবন শুরু হয় ) তিনি তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন তাঁকে যখন পত্রিকাটির সম্পাদক বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে লিখতে অনুরোধ করেন তিনি এই অপূর্ব দেশটি (ঈযধৎসরহম ঈড়ঁহঃৎু) সম্পর্কে লিখতে রাজি হয়ে যান এবং ঠিক করেন তিনি তাঁর পূর্ব পরিচিত কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করবেন এবং তাদের তিনি দেশটি সম্পর্কে তিনটি ইতিবাচক ও দুটি নেতিবাচক বিষয় সম্পর্কে নির্মোহ ভাবে বলতে বলবেন । তিনি যোগাযোগ করেন ফারুখ সোবহান, একজন বড়মাপের শিল্পোদ্যোক্তা, একজন জ্যেষ্ঠ আমলা, একজন সিনিয়র ব্যাংকার, একজন ব্যবসায়ী যিনি ১৯৭১ সালের আগে করাচিতে বসবাস করতেন, একজন প্রবাসি বাঙালি মহিলা যিনি নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন ও একজন স্বনামধন্য লেখক। সকলের উত্তর কম বেশী অনেকটা একই রকমের । তারা সকলে পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন যে কটি খাত এই উন্নয়নে অবদান রেখেছে তার মধ্যে আছে কৃষি, তৈরি পোশাক রপ্তানি, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা (রেমিটেন্স), সেবা খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সাফল্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিক সংখ্যায় নারীর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশ, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী উদ্যোক্তাদের আবির্ভাব, শিক্ষার সামগ্রিক অগ্রগতি, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থার সাফল্য, বেসরকারি খাতের প্রসার, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, জঙ্গিবাদ দমন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি প্রভৃতি । সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে । তবে সকলে বর্তমানে কোভিড-১৯ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত । তাদের মতে বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতি ধরে রাখা সমস্যা হতে পারে যদি এই মহামারিকে সফলতার সাথে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ মোকাবেলা করতে না পারে । তবে এরই মধ্যে বুধবার বিশ্বব্যাংক আগাম বার্তা দিয়েছে এই বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি ৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে যে সব সমস্যা আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আধুনিক প্রশাসন চালানোর মতো যোগ্যতা ও মেধা সম্পন্ন আমলাতন্ত্রের অভাব, চরম আয় বৈষম্য, দুর্নীতি দমনে সরকারের ব্যর্থতা, সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকা-ের ঘাটতি ইত্যাদি। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে বিত্তবানদের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে যার ফলে সুষ্ঠু রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আসিফ জাবেদ পাকিস্তানের ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ চড়ষরপু ওহংঃরঃঁঃব (ঝউচ), ওংষধসধনধফ একজন গবেষক। তিনি লিখেছেন সম্প্রতি আস্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের মাথা পিছু গড় আয় (জিডিপি) পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে বেশি ঘোষণা দিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । তিনি উল্লেখ করেছেন শুধু আইএমএফ নয় বিশ্বের অনেক গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এই ধরণের ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এবং বলেছেন বিশ্বের এই কোভিড-১৯ জনিত দুঃসময়ে যে তেইশটি দেশ ইতিবাচক অর্থনৈতিক অগ্রগতি বজায় রেখেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম । যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত পুঁজি ব্যবস্থাপনা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাস (এড়ষফসধহ ঝধপয) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে বাংলাদেশ আগামি দিনে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে । তিনি এও বলেছেন বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক লীগের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের পঁচিশতম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে । আসিফ জাবেদ বিভিন্ন পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বলেছেন পাকিস্তানের বাংলাদেশ হতে অনেক কিছু শেখার আছে । সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশ হতে পাকিস্তানের পিছিয়ে পড়ার জন্য আসিফ জাবেদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অনেক ভ্রান্ত নীতির সমালোচনা করেন । তিনিও কোভিড-১৯ পরবর্তি সময়টা সকলের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন ।
মাজিদ আজ ঝড়ঁঃয অংরধহ ঋড়ৎঁস ড়ভ ঊসঢ়ষড়ুবৎং এর প্রথম নির্বাচিত সভাপতি । তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেক পরিসংখ্যান ব্যবহার করছেন । তিনিও বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পিছনে যে সব বিষয় ভূমিকা রেখেছে তা উল্লেখ করে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও কৃষির উপর । ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তরুণ প্রজন্মকে যারা ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নানা ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন । মাজিদ আজিজ তার প্রবন্ধ শেষ করেছেন শেখ হাসিনার বক্তব্যের একটি উদ্বৃতি দিয়ে যেখানে তিনি লিখেছেন ‘বাংলাদেশ কোন ধনী দেশ নয়, কিন্তু আমাদের একটা বড় হৃদয় আছে’ ।
ড. ফরিদা খান যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক । তিনি তাঁর ঞধশরহম ঝঃড়পশ প্রবন্ধে প্রশ্ন রেখেছেন বাংলাদেশ কি কোভিড-১৯ পরবর্তিকালে তার এই চোখ ধাঁধানো অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে পারবে? তিনি লিখেছেন বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বলেছেন পদ্মা সেতু চালু হলে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে । ড.ফরিদা খানম ব্যাংকিং সেক্টরের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতাকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন বাংলাদেশে একটি কার্যকর বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কারণে গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । তাঁর মতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পারলে কোভিড-১৯ পরবর্তি কালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি থেমে থাকবে না ।
ডানকান ফারলেট বিশ্বখ্যাত ফরেন এফেয়ার্স ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না ইনস্টিটিউটের এককজন গবেষক । তিনি বাংলাদেশের কূটনীতি নিয়ে লিখেছেন । তাঁর লেখার শিরোনাম হচ্ছে দগধষরপব ঞড়ধিৎফং ঘড়হব?’ তিনি তাঁর লেখার শুরুতেই বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থপনার প্রশংসা করেছেন এবং মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বকে । তিনি এই মহামারি দমনে ভারতের সহায়তারও প্রশংসা করেছেন । তিনি লিখেছেন বাংলাদেশের স্থপতি, সেই দেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ’সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়’ বিদেশ নীতিতে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আস্থা রেখেছেন । সেই কারণেই বাংলাদেশ পাকিস্তান ছাড়া অন্যান্য সকল প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখতে সক্ষম হয়েছে । তাঁর মতে পাকিস্তান যদিও বার বার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের উন্নতি করতে তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি কারণ দুই দেশের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে । বারটলেটের মতে বাংলাদেশের সাথে যেমন ভারতের সম্পর্ক ভালো ঠিক তেমন ভাবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও ভাল । তিনি মনে করেন এটি বাংলাদেশের কূটনীতির মুন্সিয়ানার পরিচয় বহন করে । শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন তাঁর নেতৃত্বগুণে এই কঠিন সময়েও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পরেনি । তবে তিনি মনে করেন এই কোভিড-১৯ এর কারণে যে সকল শ্রমিক বেকার হয়েছেন তাদের জন্য পুনরায় কর্মসংস্থান করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হতে পারে আগামি দিনে । তবে এই সমস্যার মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলোও পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ডানকান বারটলেট ।
ড. আহরার আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটার ব্লাক হিল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক । তিনি অন্যান্যদের মতো পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরের অবিশ্বাস্য উত্তান । আশংকা প্রকাশ করেছেন মাদক, নারী নির্যাতন, বায়ূদূষণ, মাঝে মাঝে ধর্মীয় উগ্রবাদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা আর লাগামহীন দুর্নীতি সম্পর্কে । বলেছেন বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ বীরের মতা অগ্রসর হয়েছে কিন্তু অগ্রযাত্রাতে ধরে রাখতে হলে সর্বক্ষেত্রে চাই যোগ্য ও মেধা সম্পন্ন নেতৃত্ব। তিনি সর্ব ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতারর উপর জোর দেন ।
বিরুপাক্ষ পালের সাথে এই দেশের অনেকেই পরিচিত । এক সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক । তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নকে এক বিস্ময় বলে উল্লেখ করেছেন । তিনি এই বিস্ময়কর অর্জনের জন্য মূলত উদার অর্থনৈতিক নীতি, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জননীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন । বিরুপাক্ষ পাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সূত্রপাত দেশটির স্থপতি শেখ মুজিব করেছেন বলে উল্লেখ করে লিখেছেন তা হঠাৎ করে থমকে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাঁকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে । কিন্তু তিনি দেশটাকে একটা শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করিয়ে গিয়েছিলেন । তার মতে বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ । অন্যদের মতো তিনিও বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । দেশটির দুর্বলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি অদক্ষ আমলাতন্ত্র, শিক্ষার মান, ধীর গতি সম্পন্ন বিচার ব্যবস্থা, মানুষের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা, ও পরিবশ দূষণের উল্লেখ করেছেন । এই সব বিষয় নিয়ে সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন । তিনি আরো বলেন যে দেশটিতে দারিদ্র্য নিত্য সঙ্গী হিসেবে অনেক বিশ্লেক এক সময় মনে করতেন তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন । বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার সিংহ ভাগ হয়েছে গত বার বছরে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ।
পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাগাজিনে বাংলাদেশের প্রশংসা শুনলে সকলের ভাল লাগে । ইতোমধ্যে লন্ডনের ইকনোমিস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজ, ভারতের অনেক গণমাধ্যম বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরে উননয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তবে একটি আশংকার কথা না বললেই নয় আর তা হচ্ছে সাম্প্রতিককালে অনেক অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে যারা সরকারকে নানা ভাবে বিপদের মুখে ফেলতে উন্মুখ হয়ে আছেন । বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার একশত বছর উদযাপন করবে না । সুতরাং আগামী পঞ্চাশ বছর যেন বিগত পঞ্চাশ বছরের চেয়ে আরো আলোকোজ্জ্বল হয় তার পরিকল্পনা এখন হতেই করতে হবে । জয়তু শেখ হাসিনা । জয়তু বাংলাদেশ । দীর্ঘজীবী হোক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতি ।

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক