আক্রান্ত ৪০,৮০১, মৃত্যু ৩৮৯ জনের

চট্টগ্রামে করোনার এক বছর
গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত

ভূঁইয়া নজরুল <
করোনা সংক্রমণের এক বছর পূর্ণ করলো চট্টগ্রাম। গত বছরের ৩ এপ্রিল দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আক্রান্তের মাধ্যমে চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪০ হজার ৮০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে নগরে ৩২ হাজার ৪৯৮ জন ও উপজেলায় ৮ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার মধ্যে আক্রান্তের শীর্ষে হাটহাজারী। এ উপজেলায় এক হাজার ৮৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে গত এক বছরে মারা গেছেন ৩৮৯ জন। এরমধ্যে নগরে ২৮৫ জন ও উপজেলায় ১০৪ জন।
চট্টগ্রামে এবার করোনা পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। তিনি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমি কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাথে মিটিং করে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা ৬টার পর মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান, রেস্তোরাঁ এবং শপিংমল বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করেছি। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, কোভিড পরিস্থিতি বাড়লে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনও ঘোষণা করা হতে পারে। জেলা কোভিড ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাথে মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সকল বিনোদন কেন্দ্র এবং সিনেমা হল, জনসমাগম আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা গত বৃহস্পতিবার দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলায়ও সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যিনি মাঠ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা উল্লেখ করে বিআইটিআইডি হাসপাতালের ল্যাবের ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘এবার করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। পজিটিভ শনাক্তের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতেই বাড়ছে শঙ্কা।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনই কঠোর না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। নগরের হাসপাতালগুলো রোগী ম্যানেজ করতে পারবে না।’
সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাতটি আইসিইউ শয্যা ছাড়া কোথাও শয্যা খালি নেই। করোনা রোগীদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০৪ জন সাধারণ শয্যায় এবং ৩ জন আইসিইউতে, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২০ জন সাধারণ শয্যায়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৬২ জন সাধারণ শয্যায় এবং ১০ জন আইসিইউতে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ৭৭ জন এবং আইসিইউতে ১৬ জন, আল মানাহিল নার্চার হাসপাতালে ৩৩ জন সাধারণ শয্যায়, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৩৫ জন সাধারণ শয্যায় এবং ১০ জন আইসিইউতে এবং পার্কভিউ হাসপাতালে ৬৫ জন সাধারণ শয্যায় এবং ১০ জন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল এবং হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে এখনো রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এদিকে চট্টগ্রামে গতকাল ২ হাজার ৫৩৫ নমুনায় একদিনেই ৫১৮ জন করোনায় শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ৪৩৬ জন ও উপজেলায় ৮২ জন। হঠাৎ করে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কি উদ্যোগ নিচ্ছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসীকে সচেতন করতে আমরা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। একইসাথে আইসোলেশন সেন্টার চালু করা যায় কিনা তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা শনাক্তের পর সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। শনাক্তের হার অনেক কমে এসেছিল। এই কমে আসার গ্রাফ গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কিন্তু গত মাসের মাঝামাঝি থেকে তা বাড়তে শুরু করে। গত বুধবার যেখানে চট্টগ্রামে ২৮৭ জন করোনায় শনাক্ত হয়েছিল গতকাল একদিনেই তা ৫১৮ জনে পৌঁছেছে।