অনুতপ্ত জাবেদ ইকবালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বোমা মিজানের মৃত্যুদণ্ড

জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ পলাতক জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান

সুপ্রভাত ডেস্ক »

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল আদালতে বোমা হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেও ‘অনুতপ্ত’ হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

১৬ বছর আগে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আত্মঘাতী ওই বোমা হামলার ঘটনায় জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ পলাতক জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই অর্থ দিতে না পারলে তাকে আরও দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মোহাম্মদ ইউনুস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “৩০২ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন ও অন্য আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আসামি জাবেদ ইকবাল মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিচার কাজে সহযোগিতা করেছে। ঘটনার সময় সে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। ঘটনার বিষয়ে অনুতপ্ত ছিল বলে আদালতকে জানিয়েছে। তা বিবেচনায় নিয়ে তাকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার প্রায় এক ঘণ্টা পর আদালত কক্ষ থেকে পুলিশ প্রহরায় জাবেদ ইকবালকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

সে সময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে শুরুতে নিরব থাকেন জাবেদ। পরে তিনি বলেন, “আমি দোষী নই।”

আদালতের কাছে বাবার সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলেন জাবেদ ইকবাল। আদালত অনুমতি দিলে রায় ঘোষণার পর ছেলের সাথে দেখা করেন বাবা আবদুল আউয়াল শিকদার।

পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অন্য ঘটনায় জড়িত হলেও এ ঘটনায় সে দোষী না। আমরা আপিল করব। সে আদালতে বলেছে, অনুতপ্ত। আমরা পুরো পরিবার তার জন্য বিধ্বস্ত এখন।”

সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ রায়ের বিষয়ে বলেন, “এ ঘটনার ভিকটিমের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও প্রমাণ যাচাই করেছে শাস্তি দিয়েছে আদালত। অনেক সাক্ষী জাবেদ ইকবালকে শনাক্তও করেছে। জাবেদ ইকবালও সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। সব বিবেচনায় নিয়ে একজনকে ফাঁসি ও অন্যজনকে যাবজ্জীবনের এই সাজা দেওয়া হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ওই হামলা বহুদিনের পরিকল্পিত ঘটনা। নীলনকশার পরিকল্পনা জাবেদ ইকবাল ও জাহিদুল ইসলাম মিজানসহ আসামিরা বাস্তবায়ন করেছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বলেন, “আদালত রায়ে বলেছে, জাবেদ ইকবালের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা ছিল। তবে আদালতকে জাবেদ ইকবাল সহযোগিতা করেছে। এসব কারণে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তারা পুরোটা একটা গ্যাং ছিল। পুরো ঘটনা তার নলেজে ছিল।”

জাবেদ ইকবালের যাবজ্জীবন সাজার বিষয়ে পিপি মনোরঞ্জন দাশ বলেন,“ঘটনার সময় তার বয়স কম ছিল। সে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র। মামলার বিচার চলাকালে তার সহযোগিতা এবং তার অনুতপ্ত হওয়া- এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে।”

২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশের তল্লাশি চৌকির সামনে ওই বোমা হামলা চালায় জেএমবি সদস্যরা।

ওই ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং শাহাবুদ্দিন নামে এক বিচারপ্রার্থীর প্রাণ যায়। আহত হন কনস্টেবল আবদুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, শামসুল কবির ও আবু রায়হানসহ ১০ জন।

পরে আহত পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিদর্শক হ্লা চিং প্রুং।

সেখানে জেএমবির চট্টগ্রাম শাখার বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল এবং বোমার কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে আসামি করা হয়।

সূত্র : বিডিনিউজ