যে তুমি কাঁদাও এসে

আমার প্রথম বই

আকতার হোসাইন »

আমার প্রথম বই ‘যে তুমি কাঁদাও এসে’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে।
প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি প্রায় সবারই একইরকম। অনেকের মতে, প্রথম সন্তানের পিতা বা মাতা হওয়ার মতো মিশ্র অনুভূতি। আমার সেরকম অনুভূতি হয়েছিল কিনা এখন আর মনে পড়ছে না। তবে, প্রথম বই নিয়ে আমি অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। আমি প্রথম দিকে ছড়া লিখলেও ৭৯ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলাম। তার মধ্যে কিছু কবিতা পত্রিকার সাহিত্যপাতায়, লিটল ম্যাগাজিনে মোহাম্মদ আকতার হোসাইন নামে ছাপা হয়। বিশেষ করে দৈনিক আজাদীর সাহিত্যপাতায়। ৮৪ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত আমি লেখালিখি থেকে একেবারে দূরে সরে গিয়েছিলাম অথবা কবিতা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল বলা যায়। ৯৫ এর শেষার্ধে ছোটকাগজ তোলপাড় সম্পাদক কবি ইউসুফ মুহাম্মদ আমাকে তোলপাড়ের জন্য কবিতা দিতে বলেন। তখন আমি একটি পদ্য লিখি, যা দিয়ে আমার লেখালিখির আবার নতুন যাত্রা শুরু হয়।
বই বের করার জন্য আমাকে প্রথম তাগাদা দেন আমার মামা দৈনিক আজাদীর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক সিদ্দিক আহমেদ। কিন্তু সদ্যলিখিত ৮/১০ টা কবিতা দিয়ে বই বের করা সম্ভব নয় বলে চুপ করে ছিলাম। আমার আগে লেখা কবিতাগুলো কোথায় আছে, খাতাটা কোথায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী তখন পুরনো খাতাটা বের করে দিলেন। প্রথম দিকের লেখা। আবেগে ঠাসা বেশির ভাগ প্রেমের কবিতা। সেখান থেকে শ’ খানেক কবিতা বাছাই করে আমি প্রথমে বন্ধু ইউসুফ মুহাম্মদ এবং পরে মামা সিদ্দিক আহমেদকে দিলাম সম্পাদনা করে দেওয়ার জন্য। তারা কাঁটাছেঁড়া করে কবিতাগুলোর এমন ‘মারেবাপ’ করে দিলেন যে নিজের কবিতা নিজেই চিনতে পারছিলাম না। তখন চট্টগ্রামে এতো প্রকাশনী ছিল না। শৈলী মাত্র যাত্রা শুরু করেছে দুই-তিনটা বই দিয়ে। সিদ্দিক মামা শৈলীর কর্ণধার শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফের সাথে আমাকে ট্যাগ করে দিলেন। নতুন লেখক বলে প্রথমে তিনি গাঁইগুঁই করলেও কবিতা পড়ে দেখে তিনি অবশেষে রাজি হলেন। উত্তম সেনের সাথে আমার আগে থেকেই ভাব-পরিচয় ছিল। তাঁকে ফোন করলাম ঢাকায়। তিনি চট্টগ্রাম এসে আমার বইয়ের প্রচ্ছদ করলেন, সাথে রাশেদ ভাইয়ের অনুরোধে আরও কয়েকটি শিশুতোষ গ্রন্থের প্রচ্ছদ করলেন। সে বছরই শৈলী কয়েকটি বইয়ের প্রকাশনা নিয়ে তার নতুন যাত্রা শুরু করলো। ৯৬ সালে বিজয় মেলায় আমার বইটি স্টলে আসার পর অনেকের বেশ কটুকাটব্য ( অন্তরালে) শুনতে হয়েছে। আমি নাকি সৌদি আরব ছিলাম, সেখান থেকে এসে টাকার জোরে বই বের করে ফেলেছি। কিন্তু বইটি পাঠক সমাদৃত হলো। বইমেলায় চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক মমতাজ আলী খানকে রাশেদ ভাই আমার একটি বই হাতে দিয়ে অনুরোধ করলেন একটু পড়ে দেখতে এবং ভালো লাগলে একটি আলোচনা লিখতে। একদিন দেখি দৈনিক আজাদীর সাহিত্যপাতায় অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে বিশাল একটি আলোচনা লিখেছেন মমতাজ আলী খান। এরপর সিদ্দিক আহমেদ লিখলেন দৈনিক পূর্বকোণের সাহিত্যপাতায়। কবি কামরুল হাসান বাদল, কবি নাজিমুদ্দিন শ্যামল আলোচনা লিখলেন। বইটি এরপর পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে একুশের বইমেলায়ও বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেলো। কারেন্ট বুক সেন্টারের শাহীন কয়েকবার ফোন করে বইটি নিলেন। একটা কথা লেখা উচিত, প্রথম মুদ্রণে কিছু ভুল পাওয়ায় রাশেদ ভাই দ্রুত দ্বিতীয় মুদ্রণ করলেন নিজের ক্ষতি স্বীকার করে এবং বইটির প্রচারনায় নিজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। আশির দশকে যারা আমাকে চিনতেন বা একসাথে লেখালিখি করেছি, তাদের অনেকেই আমাকে তেমন একটা পাত্তা দিলেন না। অনেকে জলো লেখক, ছড়া লেখক বলে উন্নাসিকতা দেখালেন। পরে তাঁদের অনেকের সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে এবং কবি হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন।