বরইতলী ও হারবাংয়ে দুই শতাধিক বাগান
এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :
সারাবছর ফুল চাষ আর হরদম বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ার কারণে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফুলের গ্রামখ্যাত বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়ন এখন জাতীয় অর্থনীতির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে ফুলের গ্রামের এই জনপদের দুইশতাধিক বাগান থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করছেন চাষীরা। দুইদশক আগে অনেকে শখের বসে ফুল চাষ শুরু করলেও এখন এই জনপদে অন্তত ২শ ৭৫একর জমিতে গোলাপ, গ্যাডিওলাস ও রজনীগন্ধাসহ হরেক জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে। আর ফুল চাষে স্বনির্ভরতা তৈরি হওয়ায় দেখা দেখিতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণ জমিতেও ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা। সরেজমিনে জানা গেছে, ফুলের গ্রাম বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের অবস্থান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া বিস্তীর্ণ জমিতে। দুইদশক আগে থেকে সড়কের দু’পাশে ডানা মেলেছে গোলাপ বাগান। মহাসড়ক ধরে পথ চলতেই চোখ আটকে যাবে যে কারও। চোখ যতোদূর যাবে দেখা মিলবে লাল গোলাপ পাপঁড়ি মেলেছে। চলার পথে থামতেই ভেসে আসে গোলাপের সুগন্ধ। আর গোলাপ চাষের কারণে ‘ফুলের গ্রাম’ খ্যাতি পেয়েছে বরইতলী ও হারবাং দুইটি ইউনিয়ন। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবছর বেড়ে চলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন। সেখানে বরইতলী ও হারবাং জনপদে শুরু হওয়া পরিবেশবান্ধব ফুলের চাষ নিসন্দেহে কৃষি ব্যবস্থার জন্য নতুন মাইলফলক। আশার কথা হলো তামাকের বিকল্প হিসেবে ফুল চাষকে আরও জনপ্রিয় করতে স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশহিসেবে ফুল চাষের পরিধি আরও বাড়াতে এবং ফুলের গ্রামকে পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট করার পরিকল্পনার কথা ভাবছেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। গত মঙ্গলবার বিকালে বরইতলী ইউনিয়নের একাধিক গোলাপ বাগান ঘুরে দেখে স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা জানান ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরিজ। এসময় মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন ছাড়াও বরইতলী-হারবাং ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং বাগান মালিক ও ফুল ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।মতবিনিময় সভায় চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরিজ বলেন, বর্তমানে এই জনপদের দুইশতাধিক বাগান থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করছেন চাষিরা। আমরা চাই পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসনের বদলে পরিবেশবান্ধব ফুলের চাষ বাড়াতে। সেইজন্য ফুল চাষকে আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি।ইউএনও বলেন, পরিকল্পনার অংশহিসেবে ফুল চাষের পরিধি আরও বাড়াতে এবং ফুলের গ্রামের এই জনপদকে পর্যটনবান্ধব স্পট করার জন্য কাজ করবে উপজেলা প্রশাসন। তাই বাগান মালিক ও ফুল ব্যবসায়ী সবার সঙ্গে কথা বলছি। সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এখানকার দুইশতাধিক বাগান থেকে ফুলের ব্যবসা আরো বাড়বে, একইসঙ্গে এই জনপদকে পর্যটন স্পটে পরিণত করতে পারবো। বরইতলীতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফুল চাষে জড়িত রোজ গার্ডেনের সত্ত্বাধিকারী মঈনুল ইসলাম। স্থানীয় বাগান মালিকদের দাবি, বিশেষ দিনগুলোতে এখানকার ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। প্রতি একশো গোলাপ বাগান থেকে চার থেকে পাঁচশো টাকায় বিক্রি হয়। তবে বিশেষ দিন ছাড়া বেশিরভাগ দিনই প্রতি একশো গোলাপ ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এসব গোলাপ বাগান থেকে এ দামে বিক্রি হলেও বাইরের দোকানগুলোতে আট থেকে দশগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়।বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কেউ গোলাপ তুলছেন। কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক জানালেন এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন তাঁরা। বাগান থেকে ফুল কেটে তা বাঁধাই পরবর্তীতে গাড়িতে তুলে দেন। কাজের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বর্তমানে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা পান। বছর আগেও পেতেন তিনশ টাকা। বর্তমানে দুই শতাধিক বাগানে ফুল কাটা ও বাঁধাই কাজ করছেন অন্তত বারশ শ্রমিক। এদের কেউ আবার মাসিক বেতনভিত্তিক। চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন বলেন, বরইতলী ইউনিয়নে চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাডিওলাস ও ১৬ হেক্টর রজনীগন্ধাসহ মোট ১শ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হচ্ছে। আর চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন পাচঁ শতাধিক চাষি ও হাজারের মতো শ্রমিক।