আশা জাগিয়েও হতাশায় শেষ বাংলাদেশের

সুপ্রভাত ডেস্ক »

উইকেটে গিয়ে তৃতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ দিলেন গ্লেন ফিলিপস। সোজা হাত বরাবর আসা বল ধরতে পারলেন না নাজমুল হোসেন শান্ত। শূন্য রানে জীবন পেলেন ফিলিপস। এরপর আর ভুল করলেন না তিনি। মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে এনে দিলেন স্বস্তির জয়।

১৩৭ রানের লক্ষ্য দিয়েই কিউইদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। সত্তর রানের আগে তারা ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠায় ছয় ব্যাটসম্যানকে। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েন ফিলিপস ও এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা স্যান্টনার। দুজনের ৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মিরপুর টেস্ট ৪ উইকেটে জিতল নিউ জিল্যান্ড।

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের অনেকটা সময় বৃষ্টির দাপটের পর শনিবার দুপুর থেকে হেসেছে সূর্য। কিন্তু রোদের এই উজ্জ্বলতা পড়েনি বাংলাদেশের ওপর। বড় সুযোগ তৈরি করেও হতাশায়ই সিরিজ শেষ হলো তাদের। খবর বিডিনিউজের।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৭২ রানে। জবাবে নিউ জিল্যান্ড করে ১৮০ রান। ৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়বারে স্বাগতিকরা থামে ১৪৪ রানে।

সিলেট টেস্ট বাংলাদেশ জেতায় দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুই দলই এই সিরিজ থেকে পেল সমান ১২ পয়েন্ট।

স্পিন যুদ্ধের ম্যাচে চার ইনিংস মিলিয়ে খেলা হয়েছে কেবল ১৭৮.১ ওভার। সময়ের হিসেবে যা দুই দিনের কম। তবে বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতার কারণে ম্যাচ অবশ্য শেষ হয়েছে চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে।

এই মাঠে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতকে ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে ৭৪ রানে ৭ উইকেট নিয়ে জয়ের দারুণ সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল তারা। সেবার শ্রেয়াস আইয়ার ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে হেরেছিল বাংলাদেশ।

প্রায় এক বছর পর এবার যেন আইয়ার-অশ্বিনের জায়গা নিলেন ফিলিপস ও স্যান্টনার। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রান করে নিউ জিল্যান্ডকে লিড পাইয়ে দেওয়া ফিলিপস এবার অপরাজিত ৪০ রানে। স্যান্টনারের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।

দুই ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পর অনুমেয়ভাবেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ফিলিপস। দুই ম্যাচে ১৫ উইকেট পাওয়া তাইজুল ইসলামের হাতে উঠেছে সিরিজ সেরার স্বীকৃতি।

২ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের ব্যাটিং শুরু করে বাংলাদেশ। জাকির হাসান ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি বলার মতো কিছু করতে। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে স্রেফ ১০৬ রান করে বাকি ৮ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন জাকির। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ৮৬ বলের ইনিংসে ৬ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার।

দিনের শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করতে থাকা মুমিনুল হক এলবিডব্লিউ হন এজাজ প্যাটেলকে পুল করতে গিয়ে। পরে টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিম, শাহাদাত হোসেন; স্যান্টনারের পরপর দুই ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তারা দুজন।

দ্রুত তিন জনের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে আরও চেপে ধরেন এজাজ। বড় শটের চেষ্টায় মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একই ওভারে স্কুপ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন নুরুল হাসান সোহান।

একশর আগেই ৭ উইকেট হারানোর পর শেষের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করেন জাকির। লিড একশ পার করিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিনি। তাইজুল ইসলামের ১৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে দেড়শর কাছে যায় বাংলাদেশ।

বাঁহাতি স্পিনে এজাজ নেন ৬ উইকেট। আরেক বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার ধরেন ৩ শিকার। টিম সাউদির ঝুলিতে যায় অন্যটি। দলের দ্বিতীয় পেসার কাইল জেমিসনকে বোলিংয়েই আনেনি নিউ জিল্যান্ড।

রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। পঞ্চম ওভারে ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন শরিফুল ইসলাম।

দারুণ ডেলিভারিতে কেন উইলিয়ামসনকে বোকা বানান তাইজুল। তার হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বল টার্ন ও বাউন্সে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে সামনের পায়ে খেলার চেষ্টায় ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান উইলিয়ামসন। ভারসাম্য হারিয়ে স্টাম্পড হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এই সিরিজে তিনবার তাইজুলের বলে আউট হলেন তিনি।

এরপর দৃশ্যপটে হাজির মিরাজ। হেনরি নিকোলস ও টম ল্যাথামকে ফেরান তিনি। পরে তাইজুলের বলে টম ব্লান্ডেল আউট হলে ৫১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।

সাত নম্বরে নামেন প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান ফিলিপস। শুরুতেই মিরাজের বলে ফিলিপসের ওই ক্যাচ ছাড়েন শান্ত। সেটিই পরে কাল হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের জন্য।

প্রথম ইনিংসে ফিলিপসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ড্যারিল মিচেল। এবার বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় স্লিপে শান্তর হাতে ধরা পড়েন ১৯ রান করা মিচেল। রিভিউ নিয়ে তার বিদায় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

এরপর আর তেমন কোনো সুযোগই দেননি ফিলিপস ও স্যান্টনার। দলীয় একশ পেরোনোর পর মিরাজের বলে স্যান্টনারকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে টিকে যান কিউই স্পিনিং অলরাউন্ডার।

পরে আরও কয়েকবার জোরাল আবেদন করেন মিরাজ, তাইজুলরা। উইকেটের আশায় দুইবার রিভিউ নিয়েও মেলেনি সাফল্য। শেষ পর্যন্ত ফিলিপস, স্যান্টনারের দারুণ জুটির কাছেই হার মানে বাংলাদেশ।

৪৮ বলের ইনিংসে ৪ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন ফিলিপস। স্যান্টনার ৩৯ বলের ইনিংস সাজান ৩ চার ও ১ ছক্কায়।