রোগী, চিকিৎসক-নার্সদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি

ইদের দিনে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের টিম পড়েছে এক রংয়ের পাঞ্জাবি-সুপ্রভাত
করোনা হাসপাতাল

রুমন ভট্টাচার্য :

আজকের এই দিনটি পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে আনন্দ ও হৈ হুলেস্নার করে কাটানোর কথা। মহামারী কোভিড-১৯ সে আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। এটি এমন একটি রোগ যার জন্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। এই রোগে আক্রান্তদের অনেকেই এখন হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন। ঈদের এমন আনন্দ দিনে তাদের পাশে নেই আপনজনদের কেউ। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরাই এখন করোনা আক্রান্তদের আপনজন। এক কষ্টসাধ্য সময় কাটছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। যারা দিন-রাত সেবার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারপরেও আজ ঈদের দিনে একটুখানি আনন্দ ভাগাভাগির চেষ্টা ছিল করোনা হাসপাতালগুলোতে।
নেচে-গেয়ে, হৈ-হুলেস্নার করে চেষ্টা করেছেন মনোবল চাঙ্গা রাখার। এছাড়া করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডাক্তার ও নার্সরা। পরিবেশন করা হয়েছে উন্নতমানের খাবার। ঈদের দিন এমন আনন্দ ও বেদনা কাব্য ছিল চট্টগ্রামের করোনা হাসপাতাগুলোতে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল
আজ সোমবার ঈদের দিনের কোভিড-১৯ এর জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ‘ঈদ মোবারক’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। পাশাপাশি চিকিৎসক আর নার্সরা প্রত্যেক রোগীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া খাবারের মেন্যুতে রোগীদের মাঝে উন্নতখাবার পরিবশেন করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার নাথ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) সকালে ১২২ জন রোগী ছিল। তাদের প্রত্যেককে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা। ঈদ উপলক্ষে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এমনিতে প্রতিদিনই উন্নতমানের খাবার দেওয়া হয়।
কোভিড-১৯ ডেডিকেশান এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব বলেন, ‘ঈদের দিনে রোগীর সেবায় চিকিৎসকেরা নিয়োজিত রয়েছেন। রোগীদের সঙ্গে সবাই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। চিকিৎসকেরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রোববার ১১৫ জন রোগী সুস’ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল
এদিকে আজ সকালে বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ঈদের নামাজ আদায় করেন চিকিৎসাধীনরা। এরপর নাচ, গান আর গল্প ও আড্ডায় উচ্ছ্বল কিছু সময় কাটান তারা। চেষ্টা করেন স্বজনহীন কষ্ট ভুলে থাকার। তাদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু করোনা আক্রান্তরা নন, নিজেদের মত করে আনন্দ ভাগাভাগির চেষ্টা করেছেন চিকিৎসক, নার্সরাও। তারা স্বজন-পরিজনহীন অনেকদিন ধরে পরে রয়েছেন এই হাসপাতালে। তাই তো একটুখানি স্বস্তি খোঁজার প্রয়াস।
সেবার ব্রতে এসে অসহনীয় কষ্ট ভুলে সহকর্মীদের ভালো থাকার এই প্রচেষ্টায় খুশী হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি বলেন, আজকে সবাইকে নিয়ে একটা হাসপাতালে অন্যধরনের একটা ঈদ পালন করছি। প্রতিটি করোনা পজেটিভ রোগী নেগেটিভ হয়ে বাড়ি ফিরেছে সেটাই আমাদের সবার ঈদের আনন্দ। আজ ঈদের দিন একজন রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। সেই আনন্দ ঈদের আনন্দ থেকেও আমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে।’