চট্টগ্রামে এসেছে করোনা ভ্যাকসিন

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চমেকে শুরু হবে টিকা প্রয়োগ
কক্সবাজারে ৮৪ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ করোনা ভ্যাকসিন এসেছে। কোল্ড চেইন বজায় রেখে এসব ভ্যাকসিন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৭টায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ফ্রিজার ভ্যানে করে এসব ভ্যাকসিন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরকে সাথে নিয়ে এসব ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন জেলা সিভিল সার্জন ও ভ্যাকসিন গ্রহণ কমিটির সভাপতি ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. জাহাংগীর, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ ইমরান, জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট মো. হামিদ আলী ও কোল্ড চেইন টেকনেশিয়ান মো. জাফর উল্লাহ।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে প্রথম ধাপে করোনা ভ্যাকসিন এসেছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক মহানগর এলাকায় সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। রেজিস্ট্রেশনের হিসাব মতে চাহিদা অনুযায়ী ইপিআই স্টোর থেকে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। ১৮ বছরের উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগে নিজ নিজ উদ্যোগে অনলাইনে ‘সুরক্ষা ওয়েবসাইট’ এ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আশা করি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাই এ ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে। তবে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কোন ধরনের অপপ্রচার বা গুজবে কান না দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রামে প্রথম দফায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারটি বুথ থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর উদ্বোধন করবেন।
নগরীতে সিটি করপোরেশন এবং উপজেলাগুলোতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হবে। ৭ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে টিকাদান শুরুর জন্য ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি টিকার বাক্স সিটি করপোরেশন নির্ধারিত কেন্দ্র এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পাঠানো হবে। সিভিল সার্জন জানান, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে দুটি করে আইস লাইনড রিফ্রিজারেটর (আইএলআর) আছে, যেখানে টিকা সংরক্ষণ করা হবে। ভ্যাকসিনেটর ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এগুলো হল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস (বিআইটিআইডি), সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন, সাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল ও বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী, সকল অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্মুখ সারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক-বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রপরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মুখ সারির গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, জাতীয় দলের খেলোয়ার, বাফার, ইমার্জেন্সি ও আউটব্রেকারদের মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। তবে ১৮ বছরের নিচে বয়সী ও গর্ভবতী নারী এ ভ্যাকসিন পাবে না।
কক্সবাজারে করোনার টিকা পৌঁছেছে
কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসের টিকা এসেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ৮৪ হাজার ডোজ করোনার ভাইরাসের টিকা কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের ইপিআই স্টোরে পৌঁছানো হয়। কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের জেলা ইপিআই সুপার সাইফুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান, জেলা ড্রাগ সুপার রোমেল বড়ুয়া, কোল্ড চেইন ট্রেইনার তাপস কুমার বড়ুয়া এবং তিনি নিজে সম্মিলিত ভাবে বেক্সিমকো ফার্মার একটি কাভার্ড ফ্রিজার ভ্যানে করে আনা এসব টিকা গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও জানান, ৮৪ হাজার ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকাতে ৮ হাজার ৪০০ ভায়াল রয়েছে। প্রতিটি কার্টুনে এক হাজার ২০০ ভায়াল টিকা আছে। প্রতিটি ভায়ালে টিকা রয়েছে ১০ ডোজ। সে হিসাবে কক্সবাজারের ৪২ হাজার নাগরিককে করোনা ভাইরাসের এই টিকা দেওয়া যাবে। একজন নাগরিককে ২ ডোজ করে করোনা ভাইরাসের এই টিকা দিতে হবে। এক ডোজ দেওয়ার ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, গতকাল ও আজ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সহ প্রতি উপজেলা থেকে ৫ জনকে মানবদেহে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ও ৩ ফেব্রুয়ারি ২ দফায় জেলার টেকনেশিয়ান, নার্স, উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, পরিবার পরিকল্পনা ভিজিটরসহ সংশ্লিদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এরপর জেলা স্বাস্থ্য কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির দিকে জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।
ইপিআই সুপার আরো জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে কক্সবাজার সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা সদর হাসপাতাল ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে কক্সবাজার জেলার করোনা ভাইরাসের টিকাদান কেন্দ্র করা হয়েছে।