অহঙ্কারী মাছি

মামুন- সিরাজী :

একটা জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে এক সিংহ একদিন খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করছিল। এরই মধ্যে একটা মাছি উড়তে উড়তে সিংহের কাছে গিয়ে পৌঁছোয়। সিংহটা দিন তিনেক চান করেনি। তাই মাছিটা সিংহের কানের ঠিক পাশে গিয়ে ভন-ভন শব্দ করতে লাগল। সেদিন খুব কষ্ট করে সিংহের ঘুম এসেছিল। চটে গিয়ে নিজের থাবা তুলল সে। মাছি উড়ে গেল… তবে আবার এসে কানের উপর ভন-ভন শুরু করল। এতে সিংহের ভারী রাগ হল।

সিংহটা সশব্দে গর্জালো, ‘এই মাছি, সরে যা! নইলে তোকে প্রাণে মারব!’

মাছি মিহি গলায় বলল, ‘ছিঃ ছিঃ! বনরাজের মুখে এমন কথা কি শোভা পায়?’

শুনে সিংহটা আরও তেতে উঠল। বলল, ‘একে তো আমায় ঘুমোতে দিচ্ছিস না, আবার মুখে মুখে চোপা! তোর সাহস তো দেখছি কম নয়! চুপ করে চেপে যা নইলে…!’

মাছি মাঝপথে তাকে থামিয়ে বলল, ‘নইলে কীই বা করে নেবে? আমি তোমাকে ভয় করি নাকি? আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারি। সাহস থাকলে এসো…!’

সিংহ তো রেগে আগুন। মাথায় খুন চড়েছে তার। সিংহ তার কানের দিকে এক থাবা মারল। মাছি কি আর বসে থাকবে? সে উড়ে গেল আর সিংহের কানে খোঁচা লাগল। মাছিটা এবার সিংহের নাকে গিয়ে বসল। যেই সিংহটা আবার এক চাঁটি মারতে গেল, মাছিটা উড়ে গেল। সিংহের নাকেও আঘাত লাগল।

মাছিটা কখনো বা সিংহের মাথায় বসছে, কখনো গালে বসছে, কখনো তার গলায়। সিংহটা থাবা মারছে আর মারছে এবং নিজেকেই আহত করছে… মাছিটা তো ভোঁ করে এদিক ওদিক উড়ে যাচ্ছে।

ঘায়েল সিংহ বিরক্ত হল, ক্লান্ত হল। বলল, ‘মাছি দিদি, আমার ঘাট হয়েছে। এবার আমায় রেহাই দাও। তুমিই জিতে গেলে। হল তো?’

মাছি তো একেবারে অহঙ্কারে মত্ত হয়ে উড়তে উড়তে এগিয়ে চলল। সামনে তার এক হাতি সাথে দেখা হল। মাছি বলল, ‘এই হাতি, আমায় তুই প্রণাম কর! আমি বনরাজ সিংহকে পরাস্ত করেছি। এই বনে এখন আমার রাজত্ব থাকবে।’ হাতি মনে মনে ভাবল এই পাগল মাছির সঙ্গে শুধুশুধু তর্ক করে সময় নষ্ট করে কী লাভ।

তাই শুঁড় উঁচু করে হাতিটা মাছিকে প্রণাম করে রওনা হল। কাছেই এক শেয়াল সবকিছু দেখছিল। দেখে মুচকি হাসছিল। ইতিমধ্যে মাছি এসে শেয়ালকে বলল, ‘ওহে শেয়াল! আমায় তুই প্রণাম কর, আমি বনের রাজা সিংহ আর প্রকা-কায় হাতিকেও হারিয়ে এসেছি।’

সঙ্গে সঙ্গেই শেয়াল প্রণাম করল। তারপর মৃদুকণ্ঠে বলল, ‘ধন্য হে তুমি, মাছি রানি! ধন্য তুমি। ধন্য তোমার জীবন, ধন্য তোমার পিতা-মাতা! তবে হায় রে! শুনলে পাপ হয়! ঐ মাকড়সাকে দেখতে পাচ্ছ? সে তোমার নামে কত গাল দিচ্ছিল, কত নিন্দে করছিল। ওর একটু খবর নাও!’

শুনলে মাছিটা তো রেগে মেগে লাল হয়ে উঠল। গজগজ করে বলল, ‘দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা, ঐ মাকড়সাকে তো আমি এক নিমেষে শেষ করে ফেলব!’

বলার সাথে সাথে যেই মাছিটা মাকড়সার জালের উপর ছোঁ মেরেছে, অমনি সেই জালে আটকে পড়ল। নিজেকে মুক্ত করতে যতই বেশি জোরাজুরি করতে লাগল ততই বেশি আটকে পড়ল… শেষে পরিশ্রান্ত হয়ে সে হাল ছাড়ল। দেখে শেয়াল মুচকি হাসতে হাসতে  হাঁটা দিল।