অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলদেশকে ধ্বংসের অপচেষ্টা হয় ’৭৫ সালে

হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল ৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সেটিকে ধ্বংসের অপচেষ্টা হয়েছিল। তিনি বলেন, সেই সময় রাষ্ট্রকে উল্টোপথে হাঁটানোর চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ একুশ বছর ধরে রাষ্ট্র উল্টোপথেই হেঁটেছে। এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয় সেই চেতনা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক দুস্থ ও মন্দিরের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরীফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল চন্দ্র শর্মা, উত্তম কুমার শর্মা, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এ দেশের অভ্যুদয় হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারতভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। আমরা সেই সময়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র পেয়েছিলাম। যে রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে গঠিত হয়। যেখানে ধর্মীয় পরিচয়টাকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু আমরা বাঙালিদের আবহমানকাল ধরে লালিত সংস্কৃতিই আমাদের আসল পরিচয়। আমাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য নয়। আমাদের কাছে বাঙালি পরিচয়ই মুখ্য।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পেলাম ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য করতে গিয়ে আমাদের বাঙালি পরিচয়ের ওপর আঘাত আসছে, বাঙালি সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসছে, বাংলা ভাষার ওপর আঘাত আসছে। তখন আমরা সেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্মিলিতভাবে রক্তের বিনিময়ে বাংলাদশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাষ্ট্রে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই সেøাগানেই আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন। সে কারণে এ কথা তিনি সবসময় বলেন।
ড. হাছান বলেন, আমাদের দেশে যখন পূজা উৎসব হয়, তখন সেটা শুধু হিন্দু ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। মুসলমান-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সবার মাঝে সেই উৎসবের আনন্দ সঞ্চারিত হয়। আমাদের দেশে যখন ঈদ উৎসব হয় সেই আনন্দ শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। একইভাবে যখন প্রবারণা পূর্ণিমা হয়, তখন ফানুস ওড়ানোর উৎসব শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটিই হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য। এটাই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যেটি আমাদের সরকার কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে শত্রুসম্পত্তি আইন করে একটি রাষ্ট্রের ১০ শতাংশ মানুষকে শত্রু আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আইনের পরিবর্তন হয়েছে। এই আইনের বেড়াজালে যেভাবে একটি সম্প্রদায়কে হয়রানির চেষ্টা করা হয়েছে, তাদের সহায়-সম্পত্তি বেহাত হয়েছে। বেহাত করার অপচেষ্টা করা হতো। সেটি থেকে রক্ষা এবং যেগুলো বেহাত হয়ে গেছে সেগুলোকে ফেরত আনার লক্ষে আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন সংশোধন করা হয় । এবং প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়। অনেকেই ইতিমধ্যে এর সুফল পেয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সব সম্প্রদায় যেভাবে একযোগে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, সবাই মিলে একযোগে আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। এখানেই হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে আমাদের পার্থক্য। পাকিস্তানের প্রায় ৯৮ শতাংশ মুসলমান, আবার সেখানে শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা হয়। শিয়াদের মসজিদে বোমা হয়, সুন্নিদের মসজিদে বোমা হয়। সেখানে রাষ্ট্র আগায় না। রাষ্ট্র আগাতে পারেনি। এখন সবক্ষেত্রে পাকিস্তান পিছিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে। এখানেই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচনার সার্থকতা। আজকের বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক মানবউন্নয়ন সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। মানবউন্নয়ন ও সামাজিক সূচকে অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলেছি আমরা। এসব সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছি বলে। এটি অব্যাহত রাখতে হবে।
সীতাকু-ের চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নয় শুধু, পৃথিবীর সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য তীর্থস্থান উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে কিন্তু সবাই উঠতে পারে না। সে জন্য একটা ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। আমি অনেকের সাথে আলাপ করেছি, আমার মনে হয় হিন্দুকল্যাণ ট্রাস্ট একটি উদ্যোগ নিতে পারে, কিভাবে কি করা যায়। চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকব। বিজ্ঞপ্তি