হৈমন্তী আসে দুঃখ মোছাতে

রাকিবুল হাসান রাকিব :

এ-ই অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি বাংলাদেশ কার্তিকের ছোঁয়াতে, কোমল সূর্যালোকের আলোর ধারাতে হেমন্তের আগমন। তরুলতা দূর্বা ঘাসের ডগায় শিশিরের অস্তিত্বতায় শৈত্য প্রবাহ বয়ে যায়। ঘাস ফড়িং ঘুরে বেড়ায় দিগন্তজুড়ে। মাকড়সা জাল বোনে ধান ক্ষেতে; আমাদের গ্রামের পাকা ধানের ক্ষেতে বাতাসের ঢেউ খেলে যায়। কৃষকের মুখে হেমন্ত-হাসির ধারাতে ভেসে যায়; অতীতের দুঃখ মুছে যায়।

হেমন্তের আগমনে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি সতেজ হয়ে যায়। বিভিন্ন ফুলের আগমন হেমন্তে : এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুলের মেলা। মৌমাছি, প্রজাপতি, ভোমরা সকালে নিত্য সাজে গায়ে ফুলের পরাগ মেখে হরেক রঙে; হৈমন্তী বাতাসে নৃত্য করে। শিশুদের ভিড়ে এসে; তাদের সাথে খেলা করে। শিশুরা তাদের সাথে হাসে আনন্দে কোমল সুরে কথা বলে।

পাখিরা ঘুম ভাঙলে কিচিরমিচির শব্দে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ভোরে। ঘুঘুপাখি ডাকে হিজল বৃক্ষের ডালে বসে। দোয়েল পাখি তরুলতা ভিড়ে পোকা খোঁজে ঝোপেঝাড়ে। ফিঙে পাখি ধানক্ষেতে ফড়িং খোঁজে হৈমন্তী এক শিশিরভেজা কোমল রৌদ্রে। শালিক পাখি মানুষের ঘরের জানালার পাশে বৃক্ষের ডালে বসে। মানুষকে হেমন্তের নিমন্ত্রণ করে।

এক কিশোর বিশ বছর পরে, গ্রাম বাংলার লোকগানে পাগল হয়ে। রূপসী বাংলায় খোঁজে জীবনানন্দকে মিশে যাওয়া এ-ই বাংলাকে ভালোবেসে। আবার ফিরে আসিবে বলে। কতলোক ধানসিঁড়িটি নদী তীরে অবেলায় অপেক্ষা করে। হেমন্তের আগমনে, জীবনানন্দ আসবে বলে।।

তাই আমি বলে যাই;

কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে হৈমন্তী আসে।

এই বাংলায় মায়াভরা মানুষকে ভালোবেসে।

কাঁচাধান পাকা হয়ে, আসে কৃষকের ঘরে।

কুয়াশার চাদরে মোড়ানো হেমন্তের আগমনে।

আসলে এই বাংলায় হেমন্ত আসে। মানুষের ভিড়ে মানুষের ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে। হলুদ ফুলের সৌরভে উদাসীন হয়ে; অতীতের কথা ভুলে দিতে। হেমন্তের কুয়াশার চাদরে ঢেকে দিয়ে সবাইকে জড়িয়ে ধরে- চায় ঘুমাতে। অতীতের দুঃখ মোছাতে।