হামাস- ইসরায়েল যুদ্ধ ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পঞ্চম দিনে গড়ালো। ইসরায়েলের দিকে একের পর এক রকেট হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনির সশস্ত্র সংগঠন হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে । এসব হামলায় দু’দেশের নিহতের সংখ্যা প্রায় দু হাজারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি মানুষ।
আল-জাজিরা বলছে, এ পর্যন্ত্র হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪৯ -তে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু সেনাসদস্য, নারী ও শিশু রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইসরায়েলি। এদিকে, বুধবারও হামাস-ইসরায়েলের লড়াইয়ে হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। লেবাননের দুই নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ ইসরাইলি ট্যাংকের বিরুদ্ধে গাইডেড মিসাইল ব্যবহার করেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে লাগাতার বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার একাধিক স্থাপনা। গাজার বাসিন্দারা আতঙ্ক ও অন্ধকারে আরেকটি রাত কাটিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংস্থা বলছে, গাজা উপত্যকায় গেলো ২৪ ঘণ্টায় প্রায় এক লাখ ৮৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। ইসরাইলি বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলেছেন- ‘এটি গাজা থেকে হামাসের পরিচালিত সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অভিযান এবং ইসরায়েলের একটি প্রজন্ম কোনদিন তাদের দেশ এমন গুরুতর আক্রমণের শিকার হতে দেখেনি।’
আমেরিকা ইতিমধ্যে অস্ত্রবোঝাই বিমান পাঠিয়েছে ইসরায়েলে। অন্যদিকে হামাসের পক্ষে নেমেছে ইরানসহ গাজার আরও সশস্ত্র সংগঠন। ফিলিস্তিনের আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড বলেছে, তাদের যোদ্ধারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন এই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের সূচনা করে কিনা।
অন্যদিকে আরব লিগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইট ‘গাজায় সামরিক অভিযান দ্রুত বন্ধের’ দাবি করেছেন। তিনি দুই পক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান চেয়েছেন। আহমেদ আবুল বলেন, ‘ইসরায়েলের চলমান সহিংস ও চরমপন্থী নীতির বাস্তবায়ন একটি টাইমবোমার মতো। এটি এ অঞ্চলকে অদূর ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতার বড় কোনো সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ব্রাজিল বলেছে, সহিংসতা বন্ধে তারা পরিষদের দ্রুত সভা আহ্বান করবে। পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭৩ সালে মিশর ও সিরিয়া ইসরায়েলে এই ধরনের আচমকা হামলা চালায়। এ ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ লেগে যায়।
মহামারির ক্ষত এখনও শুকায়নি। এর অভিঘাত আরও কয়েকবছর ভোগাবে বিশ্ববাসীকে। সেই মহামারি শেষ না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে চরম মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সময় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ আরেকটি বিপর্যয় সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আসলে যুদ্ধ কখনও সমস্যার সমাধান দেয়নি, দেবেও না। আজ এই যুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। আগামীতে তা বিশ্বজুড়ে করবে। তাই কোনো পক্ষকে উসকানি না দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।