সেপ্টেম্বরে সম্মেলন

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে : ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ
তৃণমূলকে সংগঠিত করতে হবে : হানিফ
দলের মধ্যে কিছু সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশ করেছে : তথ্যমন্ত্রী
দলের সাংসদদের সঙ্গে সংগঠনের যেন দূরত্ব না হয় : নওফেল

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আভাস দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে জেলা সম্মেলনের আগে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিট সম্মেলনের তাগিদ দিয়েছেন তারা। তৃণমূলের সম্মেলনের জন্য জেলার আটজন নেতাকে প্রধান করে আটটি সাংগঠনিক টিম গঠনেরও ঘোষণা এসেছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা থেকে।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে এই তৃণমূল প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংগঠনিক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। চট্টগ্রামের বাসিন্দা হিসেবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও সভায় ছিলেন। খবর সারাবাংলার।
প্রতিনিধি সভার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভায় আটটি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। জেলা কমিটির আটজন নেতা এতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। আটটি টিম আগামী ২১ মে আটটি উপজেলায় গিয়ে একযোগে একই সময়ে বর্ধিত সভা করবে। সেই সভায় উপজেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হবে। পাশাপাশি তৃণমূলে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা নিরসন করা হবে। উপজেলার আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয়েও ওই সাংগঠনিক টিম উদ্যোগ নেবে।’
‘এরপর ১০ জুন জেলা কমিটির বর্ধিত সভা হবে। সেখানে হানিফ ভাই ও স্বপন ভাই আবারও উপস্থিত থাকবেন। বর্ধিত সভার পর জুন-জুলাই মাসের মধ্যে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের যেসব কমিটির মেয়াদ তিন বছরের বেশি, সেগুলোর সম্মেলন অবশ্যই শেষ করতে হবে। এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।’
মোছলেম উদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সভায় দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমাদের মোছলেম ভাই সিনিয়র নেতা। ওনার মানসম্মান আছে। উনি ব্যর্থ হোক, সেটা আমরা চাই না। সে জন্য নিচের দিকের সম্মেলন শেষ করে তারপর উপরের দিকে আসতে হবে। নিচের সম্মেলন শেষ না করে জেলা সম্মেলন করা যাবে না।’
উল্লেখ্য, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৫ সালে। ওই সম্মেলনে প্রবীণ নেতা (বর্তমানে প্রয়াত) আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সভাপতি ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন বছরের সেই কমিটি নয় বছর পার করছে।
প্রতিনিধি সভায় মাহবুবুল আলম হানিফও তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করে জেলা সম্মেলনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে হবে। দক্ষিণ জেলার সব ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলার সম্মেলন জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা শেষ করব। এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলা সম্মেলন করতে চাই।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘উত্তর জেলার মধ্যে আমরা অনেক সংসদ সদস্য পাই। কিন্তু দক্ষিণে আগে সেভাবে আসন পেতাম না। এখন পেয়েছি। যদি এখনই সংগঠনকে শক্তিশালী না করি, তাহলে আবার সংকটে পরতে হবে। তাই দুই মাসের মধ্যে তৃণমূল ও জেলার সম্মেলন শেষ করে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তৃণমূল হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা সমস্যা নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে অতিক্রম করেছে আওয়ামী লীগ। অনেক নেতা দ্বিধান্বিত ও বিচলিত হয়েছেন, অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন, মূল নেতৃত্বের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। কিন্তু তৃণমূল কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেঈমানি করেনি। দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের মধ্যে কিছু সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশ করেছে। যারা গত ১৩ বছর ধরে দল করছেন, তারা আওয়ামী লীগের দুঃসময় দেখেননি।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে নয় জনকে মন্ত্রী বানিয়েছিল। কিন্তু তারা চট্টগ্রামের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। এসব মন্ত্রীরা জামায়াতের সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। আমাদের দক্ষিণ চট্টগ্রামে অনেক নেতা তখন বাড়িতে যেতে পারেননি। অনেকেই শহরে এসে আত্মগোপন করেছিলেন। অনেককে বিদেশে চলে যেতে হয়েছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশের মতো দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করছে। এখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, দলের সাংসদদের সঙ্গে সংগঠনের যেন দূরত্ব না হয়। যদি দূরত্ব হয়, তাহলে এই উন্নয়নের যে সুফল এবং সাংগঠনিকভাবে আমাদের যে অর্জন সেটা ঘরে তুলতে পারব না।’
প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা। এছাড়া চন্দনাইশ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।
পরে রুদ্ধদ্বার কক্ষে সাংগঠনিক অধিবেশনে বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে আসা নেতারা বক্তব্য রাখেন।