সিআরবিতে কোনো হাসপাতাল নয়

বিবৃতিতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রদত্ত বিবৃতিতে সিআরবি’র ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেন ১৮৯৫ সালে অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর হিসেবে সিআরবি বা ‘সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সিআরবি হিলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ শত বছর ধরে এখানে বেড়ে উঠেছে এবং গজিয়ে উঠেছে নানান বৃক্ষবৈচিত্র্য।এসব বৃক্ষরাজিকে কেন্দ্র করে সিআরবি হিল হয়ে উঠেছে নানা প্রজাতির পাখির মনোরম ও অনিন্দ্যসুন্দর একটি অভয়ারণ্যও। বর্তমানে বহু শতবর্ষী বৃক্ষরাজি ঘেরা এ সিআরবির চতুর্পার্শ্বে ছোট ছোট পাহাড়, মনোরম সব টিলা ও স্বল্পোচ্চ উপত্যকা নিয়ে এ পুরো এলাকাটি হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের জনসমাগমের একটি অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বিনোদন কেন্দ্র। অনিন্দ্যসুন্দর এ সিআরবি’র শিরীষগাছের তলায় প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। যা এখন ঢাকার রমনার বটমূলের ছায়ানটের অনুষ্ঠানের সমতুল্য হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নির্মিত এই ভবনের নির্মাণকৌশল ও প্রতœতত্ত্ব ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে অসীম গুরুত্ব বহন করে ।
তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এ এলাকাকে হেরিটেজ সাইট
হিসেবেও ঘোষণা করেছে। এটি চট্টগ্রামের ফুসফুস। এ অপূর্ব নৈসর্গিক এলাকায় কোন স্থাপনা হবে সেটি হাসপাতাল হোক কিংবা অন্য কোন বাণিজ্যিক ভবন হোক তা কোন অবস্থাতেই একজন বিবেকসম্প্ন্ন মানুষ মেনে নিতে পারে না। এরূপ হলে পুরো সিআরবি তার আপন সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলবে। ইট পাথরের শহর চট্টগ্রামের কোথাও এ ধরনের কোন উন্মুক্ত স্থান দ্বিতীয়টি আর নেই যে যেখানে কর্মব্যস্ততার মাঝে মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সিআরবিতে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। রেলওয়ের অনেক শ্রমিক-কর্মচারীও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবন দিয়েছেন। ফলে এ সিআরবি হিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা হিসেবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে রেলওয়ের প্রশাসক নিযুক্ত করেছিলেন। সে হিসেবে এ সিআরবির পুরো অবয়ব আমার জানা আছে। আমি এসময় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পর মাঝে মাঝে এখানে ঘুরে বেড়াতাম এবং এর অপরূপ নিসর্গ উপভোগ করতাম। ইতোমধ্যে অনন্যা আবাসিক এলাকায় এবং ফয়’স লেকে এভারকেয়ার ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নামে বিশ্বমানের পৃথক দুটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানিয়েছে। চট্টগ্রামে আরো এ রকম অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে আলোচ্য হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা যায় ।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের সরকার। মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কোন কিছু বাস্তবায়ন করা গণতান্ত্রিক সরকারের লক্ষ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী সবসময় জনগণের আবেগ, অনুভূতি বুঝেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর যেখানে স্বাধীনতার গৌরবগাথা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ হওয়ার কথা সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এবং ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবের গৌঁরবমাখা সিআরবি এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া সংশ্লিষ্টদের কোনক্রমেই উচিত হয়নি।
তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার আহ্বান জানিয়ে বলেন আমি প্রয়োজনে চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো। আশা করি তিনি চট্টগ্রামবাসীর এ আবেগ-অনুভূতির সাথে একমত হবেন। সিআরবি রক্ষায় যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রতি সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।