সাংবাদিকদের হেনস্থা করলেন মোস্তাফিজ, ক্ষমা চাইলেন নওফেল

আচরণবিধি লঙ্ঘন

নিজস্ব প্রতিবেদক »

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়ন জমা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নির্বাচনী আচরণ বিধিতে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় কোনো মিছিল বা শোডাউন না দেওয়া এবং জমাদানকালে প্রার্থীসহ পাঁচ জনের বেশি সমর্থক উপস্থিত না থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মিছিল ও শোডাউন করেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। তিনি ১০ জন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এসময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষের বাইরে আরও ১০ থেকে ১২ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে টের পেয়ে তাকে সাবধান করে শোডাউন করতে নিষেধ করেন।

ফরম জমা দেওয়ার পর তাকে সাংবাদিকেরা আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি রেগে যান এবং সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলেন। দোতলা থেকে নিচ তলা ও পার্কিং এরিয়া পর্যন্ত তিনি ও তার কর্মীরা গণমাধ্যমকর্মীদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এরপর তিনি তাড়াহুড়ো করে জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ইমরান চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বের হওয়ার পর প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নকারী ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিনের দিকে তেড়ে গিয়ে মারধর করেন। প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন আচরণে উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মীরা অবাক হয়ে যান। অন্যদিকে মোস্তাফিজের সঙ্গে থাকা তার কর্মীরাও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন। তাঁর কর্মীরা বিভিন্ন টিভি সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও ট্রাইপড ছুঁড়ে ফেলেন। এসময়ে চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরাও লাঞ্ছিত হন।

এ ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও চ্যানেল আইয়ের ব্যুরো প্রধান চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সাংবাদিকের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করেন। এ ঘটনায় আমরা অবাক হয়ে যাই। এসময় তার লোকজন আমাদের ধাক্কা দিয়েছে। ক্যামরা ও ট্রাইপড ভেঙে ফেলেছে। নিচে গিয়ে আমরা ওনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। তখন তিনি আমাদের ধাক্কা দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান। তখন আমরা কয়েকজন মাটিতে পড়ে যাই।’

মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে প্রথম আক্রান্ত হওয়া ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। গায়ে হাত তোলেন। হুমকিও দেন। পেছন থেকে তাঁর কর্মীরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন।’

গায়ে হাত তোলায় ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। তারা গতকাল দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আদালত চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ ঘটনা নিয়ে রির্টানিং কর্মকর্তা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘তিনি (মোস্তাফিজুর রহমান) আমার অফিসে বেশি লোক নিয়ে এসেছিলেন। তখন আমি ওনাকে বলেছি, এখানে শোডাউন করা যাবে না। বেশি সমর্থক রাখা যাবে না। কিন্তু তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আবার সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন। এজন্য তাকে শোকজ করা হবে। তার কাছ থেকে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

ক্ষমা চাইলেন নওফেল
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর আচরণের বিষয়ে ক্ষমা চাইলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ও আমার দলের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাদের গণমাধ্যমকর্মীরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি-না সেটা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন সাংবাদিকরা। এর প্রেক্ষিতে কেউ যদি রুঢ় ব্যবহার করে, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে-এটি একটি গর্হিত কাজ হয়েছে। আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে গণমাধ্যমের ভাইদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।