সরকারিভাবে চমেকে মেলে প্লাটিলেট

নিলা চাকমা »

ডেঙ্গু জ্বর হলে অনেক রোগীর রক্তে ‘প্লাটিলেট’ নামের উপাদান কমে যায়। তখন সেই রোগীকে একটি ডোনার দিয়ে ‘প্লাটিলেট এফেরেসিস’ মেশিনের সহায়তায় রোগীর শরীরে প্লাটিলেট দেওয়া হয়। করোনার সময় থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যোগ হয়েছে এই মেশিন। তবে চমেক হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে সেবা মেলে না। এ সেবা পেতে বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ২৩৫০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১৪ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কম খরচে সেবা পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন রোগীরা।

জানা গেছে, বর্তমানে চমেক হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে দুটি ‘প্লাটিলেট এফেরেসিস’ মেশিন রয়েছে। প্রথমটি ২০২০ সালের জুনে করোনা রোগীদের জন্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধার নেওয়া হয়। পরে সরকারিভাবে সেটি চমেক হাসপাতালে রিপ্লেস করা হয়। এরপর ২০২১ সালের শুরুর দিকে দ্বিতীয় মেশিনটি যোগ হয়। জার্মানির একটি কোম্পানি থেকে ৭৮ লক্ষ টাকা দিয়ে মেশিনটি কেনা হয়। এছাড়া চারটি ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিন রয়েছে।

প্লাটিলেট কি
একজন মানুষের রক্তে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্তকণিকা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট রক্তকণিকাই হলো প্লাটিলেট। বাংলায় এটিকে বলা হয় অণুচক্রিকা। এটি রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির শরীরে প্রায় দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ পর্যন্ত প্লাটিলেট থাকে। এই সংখ্যা যদি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় তাহলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ২০ হাজারের নিচে নামলে সেটা আশংকাজনক। একেবারে ১০ হাজার এর নিচে নামলে এটিকে ক্রিটিক্যাল বলে মনে করা হয় বলে দাবি করেছেন চমেক হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশনের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. তানজিলা তাবিব চৌধুরী।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও একটা সময়ের পর প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। তবে সব রোগীদের ক্ষেত্রে এমন হয় না। সাধারণত বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত বাচ্চা এবং বয়ষ্ক ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট দ্রুত কমে যায়। কিন্ত বর্তমানে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগ প্লাটিলেট লাগছে না। দেখা যাচ্ছে প্লাটিলেট কমার পর দুই তিন দিনের পর বেড়ে যাচ্ছে। তবে এখন তো ডেঙ্গু মৌসুম শুরু। সামনে আরও বাড়বে এবং প্লাটিলেট দেওয়া লাগবে। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে ‘ব্লাড সেল সেপারেট’ এবং ‘প্লাটিলেটে এফেরেসিস’ দু ধরেনের মেশিন রয়েছে। ‘ব্লাড সেল সেপারেট’ মেশিনের মাধ্যমে ৪ জন ডোনার লাগে প্লাটিলেট দিতে। এই ৪ জন রক্তদাতা খোঁজা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। কিন্ত ‘প্লাটিলেটে এফেরেসিস’ মেশিনের মাধ্যমে মাত্র এক রক্ত দাতার সাহায্য প্লাটিলেট দেওয়া হয়। সরকারিভাবে শুধু চট্টগ্রাম হাসপাতালে শুধু এই সেবা রয়েছে। এই সেবা প্রদানে এক ধরনের কিট প্রয়োজন পড়ে। যেটির দাম প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা; যা আগে সম্পূর্ণ রোগীকেই বহন করতে হত। তবে চলতি বছরে প্রায় ১ হাজার কিট যুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০০ কিট ব্যবহৃত হয়েছে। বাকিগুলো জমা রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট কমে গেলেও যথেষ্ট কিটের ব্যবস্থা রয়েছে।’

‘প্লাটিলেট এফেরেসিস’ সুবিধার প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বলেন, অনেক রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। বিশেষ করে করোনা, ডেঙ্গু এবং ক্যান্সার রোগীদের। ‘প্লাটিলেট এফেরেসিস’ মেশিনের সহায়তায় এক ইউনিটে প্রায় ৩০ হাজার প্লাটিনেট বাড়ানো যায়। ব্লাড সেল সেপারেটর দিয়ে এক ইউনিটে শুধুমাত্র ১০ হাজার প্লাটিলেট বাড়ে। প্রাপ্তবয়ষ্ক একজন ব্যক্তি প্লাটিলেট দাতা হতে পারে। বিশেষ করে যার প্লাটিলেট কাউন্ট আড়াই লাখের উপরে এবং যার ওজন ৬৬ কেজির উপরে রয়েছে।

তবে হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীরা প্লাটিলেট দাতা হতে পারবে না।

প্লাটিলেট সেবা পাওয়া নিয়ে রোগীদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, ‘এই সেবাটি বেসরকারিতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে চমেক হাসপাতালে এখন যথেষ্ট কিট রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কোনো অসুবিধা হবে না।’