সম্ভাবনার দখিনা দুয়ার বঙ্গবন্ধু টানেল

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলের উদ্বোধন আজ। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নামে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই উদ্বোধনকে ঘিরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। দুই দফা ব্যয় সংশোধন করে এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের ভেতরে থাকা দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার করে।
টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা নদীর তলদেশ থেকে ৩১ মিটার। অর্থাৎ প্রায় ৯ তলা ভবনের সমান উচ্চতা। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে টোল প্লাজা। সেখানে যাতে গাড়ির জট না হয়, সে জন্য অন্তত ২০টি টোল বক্স রয়েছে। টানেলের টোল প্লাজা পার হয়ে সংযোগ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলে যাবে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়কের চাতরী এলাকায়।
টানেলের নগর প্রান্ত পতেঙ্গায়। নদীর তলদেশ দিয়ে এই টানেল মিলিত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝবরাবর এলাকায়। টানেল পাড়ি দিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগবে। ১০০ বছর লাইফটাইমে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছর মেইনটেন্যান্স ও অপারেশন করবে চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। উদ্বোধনের পরদিন থেকে টানেল সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এখন এই টানেল ব্যবহার করে দক্ষিণে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পর্যটননগর কক্সবাজার এবং সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ির সঙ্গে দূরত্ব কমে আসবে। এই টানেল যে শুধু যোগাযোগ ক্ষেত্রে অবদান রাখবে তা নয়। এটি নগর সম্প্রসারণেও বিশাল ভূমিকা রাখবে। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়তে এই টানেল হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। গড়ে উঠবে আবাসন। সরকারি উদ্যোগে টানেল করা হয়েছে তবে এর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে নগর ও নাগরিকসুবিধা সংক্রান্ত সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দুটি সংস্থা কাক্সিক্ষত সফলতা দেখাতে পারেনি। এখন টানেল হওয়ার পর সিটি করপোরেশন ও সিডিএ-র পরিধি ওপার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এখন থেকে পরিকল্পনা নিলে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে পারে এই দুটি সংস্থা।