মরতে হলে মরব, মাঠ ছাড়ব না : ওবায়দুল কাদের

সুপ্রভাত ডেস্ক

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ‘নানা ধরনের ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে মন্তব্য করে সেসব প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা মরতে হলে মরব, তবুও মাঠ ছাড়ব না। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটাতে জিততে পারব যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেঁচে থাকতে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেব না, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকায় শান্তি সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।
আওয়ামী লীগের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তনের যে ভুয়া খবর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, সেজন্য বিএনপিকে দুষছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, আজকেও ভুয়া একটা প্রেস রিলিজ ছেড়েছে, ফখরুল সাহেবের সব খেলা ধরে ফেলি। কী করবে, টেমস নদীর পাড় থেকে ধমক খায়। মাঝে মাঝে নার্ভাস দেখা যায়।
সরকার হটানোর ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে বিএনপি ও সমমনারা শনিবার ঢাকায় যে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ১২ জুলাই থেকে রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনারা। ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে তাদের ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে বলে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন।
বিএনপি জমায়েত হতে চায় নয়া পল্টনে। পরে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবকে বলেন, তিনি যে শান্তিপূর্ণ বলেছেন, তারা যেন শান্তিটা বজায় রাখে। আমরা শান্তি চাই, নির্বাচনের আগেও শান্তি চাই, পরেও শান্তি চাই।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে আমরা দেখিয়ে দেব- অশান্তির জবাব শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। তাদের দুরভিসন্ধি আছে, সাম্প্রদায়িক আরও-দুএকটা শক্তি নিয়ে তারা অশুভ খেলায় মেতে উঠতে পারে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি, আগামীকালও শান্তি সমাবেশ করব।
আমরা অশান্তি করতে চাই না, আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি অশান্তি করতে চায়।
বিএনপি বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য পরিণত করতে চায়। তাদের রাজনীতি হল যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। বর্তমানে সেটাই তারা প্র্যাকটিস করছে। জনগণের ওপর দুশাসন চাপিয়ে দিয়ে নিজের দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাতে চায়।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির ইতিহাস হল অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, ও স্বৈরশাসনের ইতিহাস। ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও হত্যা-ধর্ষণের এবং দুর্নীতির ইতিহাস। বারবার বিশ্বে বাংলাদেশকে কালিমা লেপন করেছে। দুর্নীতি করে নিজের আখের গোছায়।
বাংলাদেশের শান্তি-উন্নয়ন-অগ্রগতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে একটি চিহ্নিত মহল সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়তের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি মহল আবারও দেশে নৈরাজ্য করতে চায়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ‘আগুন সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে, এরাই ২০১৩, ২০১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসংযোগ ও মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে। এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রধান অন্তরায়।
কাদের বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই। এই অপশক্তিকে বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া উচিত নয়। এই অপশক্তির চিরতরে অবসান ঘটাতে হবে।
আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হব। দেশ কি সাত চল্লিশের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চলবে নাকি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শে চলবে? সমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাই আমাদের আজকে লড়াই করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি বলে বৃহস্পতিবার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল যে মন্তব্য করেছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত বক্তব্য নিয়ে, গোটা নির্বাচন নিয়ে চিন্তার সুযোগ নেই। একটা বিষয়ে একেকজন একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারে। নির্বাচন হবে না বা নির্বাচন নিয়ে তাদের ভিন্ন চিন্তা আছে- এমন তো বলেনি। অতএব, এই বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে, কোনো সংশয়-কারণ নেই। আপনারা সাংবাদিকরা তো বাইরের কেউ না- দেশেরই মানুষ, আপনারা দেখবেন।
ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে বিএনপি মহাসচিব যে অভিযোগ করেছেন, তার জবাব দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কর্মী হত্যা মামলায় খোকন গ্রেফতার; অথচ অভিযোগ করছে- রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার। তাহলে কি আপনাদের কর্মী হত্যার বিচার হবে না?
এ ক্ষেত্রে সরকার তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ছাড় দেয়নি। আপনি তো টেনেটুনে ২২ জনের নাম বলেছেন। আর আপনারা আমাদের ২২ হাজার নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছেন। আমরা ভুলিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক।

নয়াপল্টনেই