গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার চিত্র হতাশাজনক

সন্দ্বীপ উপজেলায় বাসিন্দা রয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৩ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ তিনটি চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে পদায়ন করা হয়েছে ১৪টি পদে। তবে চিকিৎসকদের মধ্যে দ্বীপের বাইরে সংযুক্তি, মাতৃত্বকালীন ও উচ্চশিক্ষার ছুটিতে রয়েছেন ছয়জন। আর বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র আটজন চিকিৎসক। সে হিসেবে বর্তমানে উপজেলার প্রতি ৪০ হাজার ৯৪৪ জনের বিপরীতে সরকারি চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১ জন। অথচ ২০১৮ সালেও প্রতি ১৫ হাজার বাসিন্দার বিপরীতে ১ জন করে সরকারি চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন।
ডেন্টাল সার্জন পদে রয়েছেন একজন চিকিৎসক, তবে নেই দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। গাইনি ও সার্জারির কনসালট্যান্ট নেই, অথচ রয়েছেন একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট (অবেদনবিদ)। এমন চিত্র শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই নয়, জনবলসংকটে একই অবস্থা বিরাজ করছে উপজেলার আরও দুটি সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রেও।
৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা। কর্মরত রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। হাসপাতালটিতে গত বছরের এপ্রিলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান বা সিজারিয়ান সেকশন চালু হয়। বর্তমানে গাইনি চিকিৎসক না থাকায় প্রসূতিদের সন্তান জন্মদানে অস্ত্রোপচার সেবা বন্ধ রয়েছে। চালুর পর কেবল ১০ জন প্রসূতি এই সেবা পেয়েছিলেন।
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে কেউ না থাকায় এক্স-রে করার জন্য রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে একজনও নেই। ছয়জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন একজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে যে ৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন তাঁদের ২ জন হারামিয়া ২০ শয্যার হাসপাতালে, অন্যজন হরিশপুর ইউনিয়নে অবস্থিত সন্দ্বীপ ১০ শয্যা হাসপাতালে কর্মরত। ওই দুটি হাসপাতালও জনবল সংকটে ধুঁকছে। হারামিয়া ২০ শয্যার হাসপাতালে ৮৪ শতাংশ পদই শূন্য। একইভাবে সন্দ্বীপ ১০ শয্যার হাসপাতালে শূন্য রয়েছে ৭২ শতাংশ পদ।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, সন্দ্বীপে যাতায়াত সমস্যার কারণে চিকিৎসকেরা সন্দ্বীপে থাকতে চান না।
মূল সমস্যাটি হচ্ছে এখানে। আসলে অধিকাংশ চিকিৎসকই গ্রামীণ জনপদে গিয়ে চাকরি করতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসংখ্যবার এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছেন, নির্দেশ দিয়েছেন এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কিন্তু কার্যত কোনো ফললাভ হয়নি। কোনোভাবেই চিকিৎসকরা শহর থেকে গ্রামে গিয়ে থাকতে চান না। তাদের চাকরির শর্তেই থাকে শুরুতে কতবছর তাদের গ্রামে চাকরি করতে হবে। চাকরির শর্ত ভঙ্গ করে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো এক অদৃশ্য কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।
এ বিষয়ে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুরুতে বেশ সোচ্চার হয়েছিলেন। আশা করি তিনি এ বিষয়ে নজর দেবেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।