সবার আগে খাস জায়গা দখলে আনতে হবে

জঙ্গল সলিমপুরের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে তথ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক »

জঙ্গল সলিমপুরের জায়গা দখল নিশ্চিতের পর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল সার্কিট হাউসে সীতাকু-ের সলিমপুরে মাস্টারপ্ল্যান নির্মাণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, অবৈধ দখলে থাকা জায়গাগুলো জেলা প্রশাসনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে এক সপ্তাহ দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে সমন্বয় করে অবৈধ জায়গা উদ্ধারে কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনার শুরুতেই উঠে আসে জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল ও আলীনগরের রাজত্বের কাহিনী। সেখানে বসবাসরতরা নিজেরা আলাদা একটা সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ওই এলাকায় প্রবেশের ছয়টি পথ তারা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এখন পুরোপুরি দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন রয়েছে এলাকাটি। জেলা প্রশাসন উচ্ছেদে গেলে নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধীরা। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এবং প্রবেশ ও বের হওয়ার একাধিক রাস্তা না থাকায় শক্তি প্রয়োগ করে জায়গা উদ্ধারে ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। তাই কৌশলী হয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়। একই মতামত দিয়েছেন র‌্যাবও। জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমানও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই মতামতকে সমর্থন করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, ছিন্নমূলের সাথে আমাদের যোগাযোগ থাকলেও আলীনগরীর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। ওই এলাকায় ইয়াছিন ও তার অনুসারীরা রাজত্ব করে আসছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে সবসময় সমর্থন করবো। একই আশ্বাস দেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানও।

কিন্তু দুই জন প্রতিনিধির এমন বক্তব্যের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘স্থানীয় দুই জন প্রতিনিধি সরাসরি বক্তব্য দিলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হতো। ওখানকার অবৈধ বসবাস উচ্ছেদে জন প্রতিনিধিদের সাথে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একসাথে পরিকল্পনা করতে হবে। যেহেতু ওই এলাকায় ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সরকারের দুই জন মন্ত্রী পরিদর্শন করেছেন এবং জেলা প্রশাসন সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। তাই এখান থেকে আর পিছু হটার সুযোগ নেই। যে কোনোভাবেই হউক জায়গা উদ্ধার করতে হবে।’
আ জ ম নাছির উদ্দীনের এই কথাকে সমর্থন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার চাইলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই। যারা ওখানে অবৈধ দখল করে আছে এবং পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হউক।

তবে প্রাথমিকভাবে সলিমপুরে প্রবেশের পথে নিরাপত্তা চৌকি বসাতে সকলে একমত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের এই প্রস্তাবে তথ্যমন্ত্রী সমর্থন করে বলেন এর অর্থায়ন করবে জেলা পরিষদ। এসময় সভায় উপস্থিত জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামত করে দেবো। এছাড়া নিরাপত্তা চৌকি ও ব্যারাক নির্মাণের জন্য ২৫ লাখ টাকা দেয়া হবে।

তখন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২৫ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হলে বাকি টাকা জেলা প্রশাসন দেবে।

এর আগে সলিমপুরে কারাগার স্থানান্তর নিয়ে নিজের অভিমত প্রকাশ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেহেতু সলিমপুরে প্রশাসনিক একটি এলাকা হচ্ছে তাই ওখানে কারাগার স্থানান্তর না করাই উত্তম। সেক্ষেত্রে আনোয়ারা কোরিয়ান ইপিজেডের পাশে এক হাজার খাস জমি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে স্থানান্তর করা যেতে পারে। তারপরও যদি করতে হয় তাহলে কারাগারের প্রবেশ ও বাহিরের পথ ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সাথে পৃথক দিক দিয়ে করতে হবে।

কারাগার বিষয়ে একই মন্তব্য করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সলিমপুর এলাকায় কারাগার স্থানান্তর করা না গেলেই ভালো হয়। তথ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী আনোয়ারায় করা যায় কিনা বিবেচনা করা যেতে পারে।’

উল্লেখ্য, সলিমপুরের প্রায় ৭৩১ একর ভূমিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর স্থানান্তরের পাশাপাশি সাফারি পার্ক, স্পোর্টস জোনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ওই এলাকার সরকারি খাস জায়গাগুলো উদ্ধারে কয়েক দফা অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযান চালিয়ে আসার পর আবারো সেসব জায়গায় ঘর গড়ে তোলা হয়। তাই সরকারি খাস জায়গাগুলো আগে নিজেদের দখলে আনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।