‘ষাঁড়ের র‌্যাম্প শো’তে দর্শনার্থীর ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

দুই সারি দর্শক, মাঝে তৈরি হয়েছে বিশেষ মঞ্চ। আয়োজন হয়েছে ‘র‌্যাম্প শো’র। তবে দেশি-বিদেশি বিখ্যাত কোন মডেলের ‘ক্যাটওয়াক’ নয়। বরং ষাঁড় হাঁটবে তার নিজস্ব স্টাইলে। এটিকে অভিহিত করা হল ‘ক্যাটেল র‌্যাম্প শো’ নামে। এমনই এক ভিন্নধর্মী ক্যাটেল শো’র আয়োজন করেছে চট্টগ্রামের এগ্রো ফার্মের তরুণ উদ্যোক্তারা।
গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী নগরের কাজির দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম মাঠে ক্যাটেল ফার্মার্স কমিউনিটি এবং ইউনিট্রেড ইভেন্টসের উদ্যোগে এ ভিন্নধর্মী আয়োজন চলে। এতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিপালিত ৩২টি এগ্রোফার্মের ১শটি ষাড় প্রদর্শিত হয়েছে। এসবের মধ্যে কিছু ষাঁড় অংশ নিয়েছে র‌্যাম্প শো’তে।
সাধারণত দেশি-বিদেশি মডেলরা একটি বিশেষ মঞ্চে ক্রমান্বয়ে মিছিলের মতো বিশেষ ভঙ্গিতে (ক্যাটওয়াক) হেঁটে, থেমে ও দেহ ঘুরিয়ে বিশেষ কোন পণ্য জনসম্মুখে প্রদর্শন করাকে র‌্যাম্প শো বলে। কিন্তু মানুষের মতই বিশেষ মঞ্চে ষাঁড় হাঁটছে। আবার তাদের দেওয়া হয়েছে নানা বেশ-ভূষণ। এক্সপোতে দর্শনার্থীতে ঠাসা ছিল অনুষ্ঠানের স্থান। সরেজমিনে এমনটি দেখা গেছে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ক্যাটেল এক্সপো-২০২২ এর আয়োজনে।
আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ ক্যাটেল এক্সপোতে প্রবেশ করতে টিকেট মূল্য ছিল ৫০ টাকা। প্রবেশ করতেই দেখা মেলে মাঠজুড়ে ৩২টি স্টলের। বিভিন্ন এগ্রোর জন্য আলাদা আলাদা করে সাজানো হয়েছে পরিপাটি স্টল। এতে প্রদর্শন করা হয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন খামারের প্রাকৃতিকভাবে প্রতিপালন করা ষাঁড়। এতে রয়েছে হরেক জাতের দেশি-বিদেশি ষাঁড়। স্টল থেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে র‌্যাম্প শো’র মঞ্চে তোলা হয়। মঞ্চের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ষাঁড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় র‌্যাম্প শোতে।
দর্শনার্থীরা আনন্দ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ষাঁড়ের র‌্যাম্প শো দেখেছে। এসময় এক দর্শনার্থী সেজানুর রহমান বলেন, ‘মডেলের র‌্যাম্প শো অনেক দেখেছি। তবে ষাঁড়ের র‌্যাম্প শো এ প্রথমবার দেখলাম।’
এতে বিশেষ নজর কেড়েছে ভুট্টি জাতের গরু। এ গরুর বিশেষত্ব হলো- দেখতে দেশি গরুর বাছুরের মতন। কিন্তু তার বয়স অনেক বেশি। এ ষাঁড় সম্পর্কে জানতে খান এগ্রোর স্বত্বাধিকারী আসিফ খানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত ভুটানের একটি গরুর জাত। এ গরুর মাংসের স্বাদও অতুলনীয়। তবে অন্যান্য জাতের তুলনায় এ গরুর দাম অনেক বেশি।’ তার কাছে থাকা ছাই রঙের প্রায় তিন ফুট উচ্চতার এ গরুর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর বয়স সাড়ে ৮ বছর। ওজন আছে ২২৬ কেজি। এটি ৭৫ শতাংশ ভুটানের ও ২৫ শতাংশ ইন্ডিয়ান ছোট জাতের গরুর মিশ্রন। গত আড়াই বছর আগে পাবনা থেকে দুটি ভুট্টি জাতের গরু নিয়েছিলাম। বর্তমানে তাদের ৬ মাস বয়সী একটি বাছুর রয়েছে।’
স্টল ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র ৩২ মাস বয়সী ১ হাজার ৭৫ কেজি ওজনের শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের ক্রস একটি গরু। কম বয়সে এত ওজন বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাহার এগ্রোর ম্যানেজার জাহিদ হোসন বলেন, ‘এরা খুবই শান্ত স্বভাবের। দ্রুত সময়ে বড় হয়। এ ষাঁড়ের ৭৫ শতাংশ শাহীওয়াল ও ২৫ শতাংশ ফ্রিজিয়ান জাতীয় মিশ্রন। এ জাতের গাভী প্রথম দু’বার গর্ভাবস্থায় দৈনিক ২৫ লিটারের বেশি দুধ তৈরিতে সক্ষম। এরপর থেকে গড়ে ১ থেকে ২ কেজি করে কমে যায়।’
সারা এগ্রোর সাড়ে ৯শ’ কেজি ওজনের ৫ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের ব্রাহমা জাতের গরুও দর্শনার্থীদের নজর এড়িয়ে যায়নি। ইন্ডিয়ান খাসা, আমেরিকান ব্রাহমা মিক্স, হরিয়ানা ও দেশীয় ষাঁড় প্রদর্শনীতে আনা হয়েছে। এ সময় প্রদর্শনী দেখতে আসা আরমান হোসেন বলেন, ‘টিকেট কেটে গরু দেখতে এলাম। আয়োজন দেখে মন ভরে গেছে। এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এমন প্রদর্শনী প্রতি বছর আয়োজন করা হলে তা দেখে তরুণরা উদ্যোগী হবে। সৃষ্টি হবে নতুন উদ্যোক্তার। হবে কর্মসংস্থানের। একই সাথে দেশীয় উৎপাদিত গরুতে দেশীয় উৎসব পালন করা সম্ভব হবে।’
চট্টগ্রাম ক্যাটেল এক্সপো ২০২২ এর সভাপতি মোহাম্মদ আকতার হোসেন জ্যাকি বলেন, ‘দেশের শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা খামারি খাতে সম্পৃক্ত হওয়ায় মাংস জাতীয় খাদ্যের যোগান, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে বেকার সমস্যার সমাধান হবে ও মাংসজাত খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ক্যাটেল এক্সপো-২০২২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আবদুস সবুর লিটন, কৃষি ও বিপণন বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক কৃষি মন্ত্রণালয়ে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এম মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হান ফারুক, চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দোলোয়ার হোসাইন ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ট্রেজারার ও এশিয়ান গ্রুপের এমডি এম এ ছালাম। এসিআই এগ্রিবিজনেজ এর প্রেসিডেন্ট ড. ফালাহ আনসারী, নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্রিডার ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রাকিবুর রহমান (টুটুল)।