শিশুদের মুখে নাটকের অশালীন সংলাপ!

প্রযুক্তির প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ব্যাংকার দম্পতি সজিব-লিমা (ছদ্মনাম)। একমাত্র পুত্র নিয়ে নগরের চকবাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তারা। তাদের পুত্রের বয়স তিন বছর। সবে কথা বলা শিখেছে, এতে খুশিই হবারই কথা বাবা-মার। কিন্ত উল্টো পড়তে হচ্ছে দুশ্চিন্তায়। তারা জানান, সন্তানকে দিনে কিছু সময়েরে জন্য মোবাইল ফোন দেওয়া হয়। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বাংলা ওয়েব সিরিজ ‘সিন্ডিকেট’ এবং ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’র বেশ কিছু অশালীন (পত্রিকায় ব্যবহার যোগ্য নয়) সংলাপ হরহামেশাই বলে যাচ্ছে শিশুটি। তারা আরও জানান, বাসায় যেমন এগুলো বলছে, বাইরে গেলেও বলতে দেখাগেছে। সমাধান হিসেবে শিশুটিকে মোবাইল ফোন দেওয়া বন্ধ, দিনের বেশ কিছু সময় ছেলের সাথে সময় কাটাচ্ছে পরিবারটি।

এর ভিত্তিতে নগরের পাঁচ-ছয়টা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবকের সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবক জানান, খেলার মাঠ নেই, তাই বিনোদনের জন্য মোবাইল ফোন তুলে দিই। কিন্ত মোবাইল ফোন দিয়েই শিখছে নানা আজেবাজে কথা। সেসব কথাগুলোর জন্য আমাদের অন্য কাছে পড়তে হচ্ছে লজ্জায়।

হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্মরণিকা তানজিম বলেন, ক্লাস করার সময় আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ থেকে কিছু শব্দ শুনি। যেটার অর্থ সেও জানে না। গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ডসহ আরও রয়েছে প্রাপ্ত বয়সীদের নানান শব্দ। যেগুলো বেশির ভাগ টিভিতে ব্যবহার হয়। জিজ্ঞেস করা হলে বলে তারাও জানায়, এসব মোবাইল ফোনে বলতে শুনেছে। তখন আমরা শিক্ষার্থীকে সেসব শব্দ না বলার জন্য সচেতন করি। এভাবে সচেতন করে আর কতদিন আটকানো যাবে।

এছাড়া কথা হয় এখলাছুর রহমান সরকারিীপ্রাথমিক বিদ্যালয়, কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক অভিভাবকের সাথে। তারা জানান শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের আসক্তি দিন দিন বাড়ছে। কিন্ত সেখানে তো শিক্ষণীয় বিষয় নেই বললেই চলে। শুধু নাটক নয় , কন্টেন ক্রিয়েটররাও অশালীন সংলাপ দৃশ্য বানাতে উঠে পড়ে লেগে গেছে। শিশুদের নির্ভরযোগী নাটক-কন্টেনের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। যার ফলে শিশুরা এসব দেখে শিখছে, বলছে। এভাবে চলতে থাকলে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। তাই এখনই এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, যারা নাটক বানাচ্ছে সম্প্রতি সময়ে অধিকাংশই মুল ধারার নাটকের সাথে জড়িত নয়। আমরা যারা শিল্পকলা- থিয়েটারে নাটক করি বরাবরই এগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছি। এখনকার নাটকের নাম, সংলাপ, দৃশ্যের কোনটির ঠিক নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেসব কন্টেন দেখে শিশুদের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। কারা বানাচ্ছে, কারা শেয়ার দিচ্ছে সেগুলো পুলিশ প্রসাশনের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নজরদারিতে আনতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে জরিমানা, শাস্তি প্রদান করতে হবে। আর ফেসবুকে যারা এসব শেয়ার দেয় তাদেরকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে। যাতে করে শিশুরা এসব দেখা থেকে বিরত থাকে। এভাবে নিজ উদ্যোগেও এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক কুন্তল বড়–য়া বলেন, প্রথমত শিশুদের স্মার্ট ফোন দেওয়া থেকে বিরত থেকে থাকতে হবে অভিভাবকদের। তাদের খেলার মাঠে নিয়ে যেতে হবে, বন্ধুদের সাথে মিশতে দিতে হবে। পরিবার থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে আগে।
নাটকে অশালীন সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যারা মঞ্চে নাটক করি সরকার কর্তৃক একটা নীতিমালা রয়েছে। আমি কতটকু অশালীন শব্দ, দৃশ্য করতে পারবো। তবে ওটিটি প্লার্টফর্মে সেরকম নীতিমালা আছে কিনা জানি না। যদি না থাকে তাহলে অতি দ্রুত তা র্কাকর করতে হবে। সে মোতাবেক নির্মাতারা কন্টেন বানাতে বাধ্য হবে। তবেই কমবে এসব অপসংস্কৃতি।

শিশুদের মোবাইল ফোনের আসাক্তি এবং অশালীন সংলাপ প্রসঙ্গ:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক লাইনুল নাহার বলেন, প্রথমত আমরা প্রযুক্তির অবদানে ইন্টারনেট হাতের মুঠোয় পাচ্ছি। শিশুরাও এ সুযোগ সুিবধা থেকে বাদ পড়ছে না। যারা অশালীন সংলাপ- দৃশ্য দিয়ে নাটক- কন্টেন বানাচ্ছে তাদের প্রতি লিখিত অভিযোগ করতে হবে আগে। আর নির্মাতাদের এসব শব্দে বাধ্যতামূলকভাবে সেন্সর ব্যবহার করতে হবে।

আর অভিাবকদের কর্তব্য হবে, প্রথমত বাসার ওয়াইফাই পাসওর্য়াড পরিবর্তন করিয়ে শিশুদের নেট ব্যবহারের সময় কমাতে হবে। কারণ জোর করে ফোন কেড়ে নিলেও হিতে বিপরীত হবে। সারাদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় শুধু নেট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া। শিশুদের সাথে বেশি বেশি করে সময় কাটাতে হবে। খেলায় আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে। গ্রামে যদি নানা-নানী থাকে তাহলে তাদের মাঝে মাঝে এনে সন্তানদের সাথে থাকতে দিতে হবে। এভাবেই সমস্যা সমাধান করতে হবে।