আলোরমুখ দেখেনি দুই প্রকল্পের একটি

আন্তঃজার্তিক পর্যটন দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই »

মিরসরাইয়ের মহামায়া সেচ প্রকল্পকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নির্মাণ করা হচ্ছে তথ্যসেবা কেন্দ্র, টয়লেট, গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন উন্নয়ন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহামায়া ও খৈয়াছড়া ঝর্নাকে পর্যটনমুখী করতে ২০১৭ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় মহামায়া সেচ প্রকল্পের জন্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও খৈয়াছড়া ঝর্নার জন্য প্রস্তাব পাঠানো ২৮ কোটি টাকার এখনো কোন সমাধান হয়নি। ২০১৭ সালে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর মহামায়া সেচ প্রকল্প আধুনিকায়ন শুরু করে বন বিভাগ। আধুনিকায়নের মধ্যে রয়েছে তথ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য ব্যারাক নির্মাণ, টয়লেট নির্মাণ, গোলছাতা ঘর নির্মাণ, বনায়ন, গাড়ি পার্কিং এরিয়া, ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ।

জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বৃদ্ধি লক্ষ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মহামায়া সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। মহামায়া সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর একটি পর্যটন এলাকা গড়ে উঠে। দিন দিন বাড়ছে ইজারার মূল্য। চলতি বছর ভ্যাটসহ ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২৯০ টাকায় ইজারা দেয়া হয় মহামায়া ইকোপার্ক। কিন্তু বৃহৎ এই পর্যটন এলাকায় রয়েছে অনেক সমস্যা। সেই সকল সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছে। যা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ।

সম্প্রতি মহামায়া ইকোপার্কে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৬৯ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তথ্যসেবা কেন্দ্র কাম স্টাফ ব্যারাকের কাজ। নির্র্মাণ করা হচ্ছে একাধিক গোল ছাতা ঘর। তবে পিকনিক স্পটসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ এখনো শুরু হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, ইকোপার্ক হওয়ার ফলে পাহাড় থেকে অনেক জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। আগে এসব পাহাড়ে বানর, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি দেখা গেলেও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। সরকার নতুন করে বনায়ন করায় বিলুপ্ত প্রাণীগুলোর পুনরায় প্রজনন ঘটতে পারে।
এদিকে ২৮ কোটি টাকার প্রস্তাবিত খৈয়াছড়া ঝর্না প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গাড়ি পার্কিং নির্মাণ, ২০০ হেক্টর সাইকাস উদ্ভিদ বনায়ন, ৬০০ হেক্টর দুষ্প্রাপ্য বিপদাপন্ন দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ, ফলদ প্রজাতি ও স্থানীয় প্রজাতির চারা রোপণ, যাতায়াতের জন্য ৫টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, পাঁচটি শৌচাগার ও ওয়াশরুম নির্মাণ, দুই কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, ১৫ ডেসিমল জমি অধিগ্রহণ, ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য আরসিসি বাউন্ডারি নির্মাণ ইত্যাদি। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় মহামায়া ইকো পার্কের জন্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও খৈয়াছড়ার প্রকল্পটি এখনো ঝুলে আছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে খৈয়াছড়া ঝর্নাটি প্রচারের মুখ দেখে। সে থেকে থেমে নেই খৈয়াছড়া ঝর্নার প্রচার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝর্না পিপাসুরা ছুটে আসে খৈয়াছড়া ঝর্নায়। প্রত্যেক বছর হাজার হাজার পর্যটক আসে এখানে। চলতি বছর খৈয়াছড়া ঝর্নার জন্য ২৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ইজারা দেয়া হয়। প্রত্যেক পর্যটকের কাছ থেকে ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য নেয়া হয়ে থাকে। তবে অতি বর্ষণে ঝর্নায় ওঠা বিপদজ্জনক।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের করেরহাট ও নারায়ণহাট রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহম্মদ খান জানান, নতুন করে বনায়নের ফলে মহামায়ায় বিলুপ্ত প্রায় বন প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন আবারো শুরু হবে। ফলে পর্যটনের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহামায়ার উন্নয়নের জন্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও খৈয়াছড়া ঝর্নার প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজ্জামেল হক শাহ চৌধুরীকে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।